আমরা অনেকেই হয়তো জানি না,ত্বক ভালো রাখার ঘরোয়া টিপস কি?আমরা অনেকেই মনে করি বয়স বাড়লেই ত্বকে বাজ পড়ে এবং বুড়িয়ে যায়।কিন্তু কথাটি পুরোপুরি সত্যি নয়।যারা কম বয়সী আছে তাদেরও ত্বকে বাজ পড়ে এবং বুড়িয়ে যেতে পারে।আর এগুলো হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন না নেয়া।যত্ন নিতে ঘরোয়া টিপস গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ত্বকে অ্যালোভেরার ব্যবহার।
আজকে আলোচনা করবো ত্বক ভালো রাখার ঘরোয়া টিপস সম্পর্কে এবং কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেয়া যায।ত্বক ভালো রাখার অনেক ধরনের উপায় আছে তার মধ্যে কিছু হল,ত্বকে অ্যালোভেরার ব্যবহার,পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।ও ত্বকের ক্ষতি হোক এমন কিছু ব্যবহার করা যাবে না। ত্বককে ভালো রাখতে হলে নিয়মিত রূপচর্চা করতে হবে।
ভূমিকা
স্কিন কেয়ার হলো এমন একটি অনুশীলন যাতে চে ত্বক বা চেহারার উন্নতি হয়।ত্বকের ক্ষতিকারক অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়। ত্বকের যত্ন নিতে বিভিন্ন ধরনের উপায় অনুশীলন করতে পারেন। ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এবং ত্বকের পুষ্টি জোগাতে নিয়মিত প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
ত্বকের সানস্ক্রিন এর ব্যবহার
প্রথমেই আমি আলোচনা করব সানস্ক্রিন সম্পর্কে। কারণ স্কিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো সানস্ক্রিন।সব সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভালো। তবে সূর্যের আলোতে এবং আগুনের তাপে যেতে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে আগুনের তাপ এবং সূর্যের তাপের ক্ষতি থেকে স্কিনকে রক্ষা করা যায় ।প্রতিটি ত্বকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়।যেমন শুষ্ক স্ক্রীন ,ওয়েল স্কিন এরকম স্কিনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
ত্বকের যত্নে হলুদ এর ব্যবহার
ত্বক ভালো রাখার ঘরোয়া টিপস এর মধ্যে অন্যতম হলো হলুদের ব্যবহার।ত্বকের যত্নে হলুদ এর ব্যবহার নতুন কিছু নয় ।তবে হলুদের ব্যবহারে উপকারও যেমন আছে, তেমন ভুল ব্যবহারে বিপদ ও আসতে পারে। অনেক আগে থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে বিয়ের আগে বর ও কন্যার গায়ে হলুদ মাখার নিয়ম ।যেটি এখন জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।এখনকার সমাজে বিয়ের অনুষ্ঠান হোক বা না হোক গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ফুটে উঠবেই।সমাজে আরো প্রচলিত আছে যে বড় কনের গায়ে হলুদ মাখলে হলুদের মতোই ফুটে উঠবে বর কনের রূপ।
এরকম সবার ধারণা থেকেই হয়তো হলুদের ব্যবহার এর প্রচলন হয়ে আসছে। সত্যিকার অর্থে হলুদ ত্বকের জন্য অনেক উপকার। ত্বকের রং ফর্সা করে, ব্রণ দূর করে ,দাগ দূর করে ও এলার্জির বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে।শুধু কাঁচা হলুদ বেটে গায়ে না মেখে হলুদের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো। এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তৈলাক্ত স্কিনে ব্যবহারের নিয়ম হলো: হলুদের সঙ্গে লেবু অথবা মধু দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।ত্বক উজ্জ্বল করতে হলুদের সঙ্গে অলিভ অয়েল বা গাজরের রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
ব্রণের সমস্যার জন্য কাঁচা হলুদের সাথে চন্দন গুড়া এবং লেবুর রস মিশিয়ে ১ মিনিট রেখে উষ্ণগরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা মনে রাখবেন হলুদ হারবাল জাতীয় উপাদানের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো। যেমন দুধ, বেসন, দই, মধু।হলুদ প্রতিদিন ব্যবহার না করে সপ্তাহে এক বা দুইদিন ব্যবহার করা ভালো।হলুদ ব্যবহারের পরে বাহিরে বের না হওয়া ভালো কারণ এতে স্কিনের ক্ষতি হয়।
ত্বকে মধু এর ব্যবহার
ত্বক দ্রুত উজ্জ্বল করার জন্য মধুর কোন বিকল্প নেই।মধু হলো এক ধরনের ঘন তরল ও মিষ্টান্ন পদার্থ। মৌমাছি ফুলের নির্যাস হতে মধু তৈরি করে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধু দিয়ে ত্বকের ঘরোয়া টিপস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
মধু ত্বকের এক্সফলিয়েট করার ক্ষমতা রাখে। মধুর সাথে কাঠ বাদামের গুঁড়ো মিশিয়ে ভেজে মালিশ করার পর ৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে দিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে অনেক সাহায্য করে।ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এক টেবিল চামচ টক দইয়ের সাথে দুই চামচ মধু মিশিয়ে হাত পায়ের ভালোভাবে মালিশ করতে হবে সপ্তাহে দুই দিন।
স্কিনের যত্নে শসার ব্যবহার
ত্বক ভালো রাখার ঘরোয়া টিপস গুলোর মধ্যে শসার ব্যবহারও একটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস।শসা শুধু আমাদের শরীরকেই কেবল ঠান্ডা রাখে না, শসা ব্যবহারে ত্বক দাগ মুক্ত হয় এবং উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়। শসা ব্লিচিং এর মত কাজ করে।শসার রস ত্বক এবং চোখের নিচের কালচে দাগ দূর করতে সাহায্য করে।ত্বক উজ্জ্বল করতে শসার রসের সাথে সামান্য একটু মধু মিশিয়ে নিন এবং এর সাথে সামান্য একটু লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকের ১৫ ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে দিন।এরপর ধুয়ে ফেলুন।লেবুতে থাকে ভিটামিন সি যা ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য চোখের গোড়ার কালো দাগ, ক্লান্তি দূর করতে শসার রস অতুলনীয়।বিশ্রামরত অবস্থায় শসার টুকরো চোখের উপর ১৫ মিনিট রেখে দিন এতে চোখের নিচের কালো দাগ এবং ক্লান্তি ভাব দূর করবে।
ত্বকে অ্যালোভেরার ব্যবহার
ত্বক ভালো রাখার ঘরোয়া টিপস এর মধ্যে আরেকটি হলো ত্বকে অ্যালোভেরার ব্যবহার।ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা খুবই উপকারী।অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়।এবং এটি নাইট ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিদিন তাজা পাতা ব্যবহার করতে বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ লাগানো ভালো ।অ্যালোভেরার তাজা পাতা ব্যবহার করতে, প্রথমে একটি তাজা পাতা ছিড়ে নিয়ে তার ভিতরের অংশ থেকে ভালো করে রস বের করতে হবে।তারপর তুলো দিয়ে মুখে ভালোভাবে অ্যালোভেরা রস লাগাতে হবে। অ্যালোভেরার রস লাগিয়ে এভাবে সারারাত থাকতে হবে সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।শুধু মুখে নয় সমস্ত শরীরেও অ্যালোভেরা লাগানো যেতে পারে। তবে সতর্কতা হল এলোভেরা রস লাগিয়ে রোদে যাওয়া ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
বেসন দিয়ে রূপচর্চা ও ত্বকের উপকারিতা
ত্বকের রোদে পোড়া ট্যান ভাব দূর করতে টক দইয়ের সাথে ভীষণ মিসয়ে ব্যবহার করলে রোদে পোড়া ট্যান ভাব দূর হয়। ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে দুধের সাথে বেসন ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের রাসায়নিক কিছু ব্যবহার করার চেয়ে প্রকৃতিকভাবে বেসন ব্যবহার করা ভালো। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এবং ত্বকে বাছ পড়া ও বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে বেসন ব্যবহার করুন।
ত্বকে চন্দন পাউডার ব্যবহারের নিয়ম ও উপকারিতা
চন্দন ব্যবহারও হল ত্বক ভালো রাখার ঘরোয়া টিপস।গোলাপ জলের সাথে চন্দন গুড়া মিশিয়ে ব্যবহার করলে মুখের অয়েলি ভাব দূর হয়।ঘুমোতে কিংবা গোসলে যাওয়ার আগে এটি মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখতে হবে।মুখের চামড়া উঠার ক্ষেত্রেও চন্দন ব্যবহার করতে পারেন।ব্যবহারের নিয়ম হলো
জল বেসন ও চন্দন পাউডার দুধের সাথে মিশিয়ে প্যাট্টি ২০-৩০ মিনিট মুখে রেখে তারপর ধূয়ে ফেলতে হবে।মুখ পরিষ্কার রাখতে ও তৈলাক্ততা দূর করতে ১/২ চামচ টমেটো , ১/২ চামচ মুলতানি মাটি, ১/২ চামচ চন্দন এর সাথে সামান্য গোলাপ জল মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে শুকিয়ে যাওয়ার পর বরফ পানিতে তুলো ভিজিয়ে সেই তুলো দিয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে ।
ত্বকের যত্ন নিতে টমেটো এর ব্যবহার
ত্বক ভালো রাখার ঘরোয়া টিপস এর মধ্যে আরেকটি উপায় হল টমেটোর ব্যবহার।ত্বকের অয়েলি ভাব দূর করতে কাঁচা টমেটো রস ৫-৭ মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
স্কিনের রোদে পোড়া ট্রান দূর করতে টমেটো ও বাদাম দুধ একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে।তাহলে ত্বকের রোদে পোড়া ট্রান দূর হবে।টমেটো এবং শসার রস একসাথে মিশিয়ে টোনার হিসেবেও স্কিনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
সবশেষে এটুকুই বলবো যে,আমাদের সকলেরই উচিত স্কিনের যত্ন নেয়া।শুষ্ক রুক্ষ ত্বকের যত্ন নিতে অবশ্যই আমাদের প্রকৃতিক উপায়ে স্কিনের যত্ন নিতে হবে।এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
স্কিন কেয়ার সম্পর্কে ত্বক ভালো রাখার ঘরোয়া টিপস এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লাগে বা উপকৃত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন।
Comments
Post a Comment