Skip to main content

অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি।একই আবহাওয়ায় অন্য দেশে যদি আপনার বেশি গরম লেগে থাকে তবে অবশ্যই এর পেছনের কারণ খুঁজে দেখা প্রয়োজন।সাধারণত চৈত্র মাসের শেষ দিক থেকে গরম শুরু হয়।গরমের দিনে গরম তো লাগবেই এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু একই আবহাওয়া অন্যদের চেয়ে যদি বেশি গরম অনুভব করেন,তাহলে এর পিছনের কারণটা খুঁজে দেখা উচিত।


আমরা অনেকেই হয়তো সূর্যের আলোকে পছন্দ করি।কিন্তু অতি উচ্চ তাপমাত্রা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।আজকে আমরা আলোচনা করব অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি?কি ধরনের খাবার খেলে গরম বাড়ে?শারীরিক সমস্যার কারণেও গরম বাড়ে।অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি এ সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

ভূমিকা

গরমের কারণে যে সমস্যাটি বেশি হয় তা হলো পানি স্বল্পতা।পানি স্বল্পতা ছাড়াও অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকে ঘামাচি এবং এলার্জি হয়।গরমের কারণে ত্বক লালচে হয়ে যায় এবং জ্বালাপোড়া করে চুলকায় ফোসকা পড়ে।অনেক সময় শরীরে ব্যথা হয়,শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচন্ড পিপাসা লাগে।

মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণেও গরম বেড়ে যায়

মানসিক সমস্যার কারণেও শরীরের গরম বেড়ে যায় এবং মাথা ব্যথাও হতে পারে।মানুষ যখন কোন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা করতে থাকে অথবা কোন একটি বিষয় যদি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।কোন বিষয়ে চিন্তার কারণ না হলেও তবে সেটি যদি ভিতরে ভিতরে চিন্তিত করে তোলে, তাহলে সেটাও হতে পারে গরম লাগা ও মাথা ব্যথার কারণ।অনেক সময় দুশ্চিন্তা বেশি হলে সঠিকভাবে কাজে মন দেয়া যায় না এবং ঠিকমতো ঘুম হয় না।এতে পরবর্তী দিনগুলিতে শরীর দুর্বল হতে থাকে।পরে গরম গরম অনুভব হয় ও মাথা ব্যথা উপসর্গ তৈরি হয়।এখানে আরেকটি বিষয় হলো,আপনি যখন বাহিরে বের হওয়ার তখন গরম লাগে না।গরম না লাগার কারণ হলো বাহিরে বের হলে দুশ্চিন্তা তৈরি হয় না সুতরাং তখন ভাল লাগে।

শারীরিক সমস্যার কারণেও গরম বাড়ে

অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি?সে সম্পর্কে তো আমরা জানবোই তবে তার আগে জানব শারীরিক সমস্যার কারণে ও গরম বাড়ে এ সম্পর্কে।থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে গরম আপনার কাছে অসহ্য একটা বিষয় হয় উঠবে।এ হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক দুশ্চিন্তায় বুঝতে হয়। থাইরেড হরমোন বেড়ে গেলে বুক ডট করে। ক্ষুধা বেড়ে গেলেও ওজন কমে যায়। ঘুমের সমস্যা ও দেখা দেয়।নারীদের ক্ষেত্রে আরো আলাদা কিছু কারণ হলো,মাসিক শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে গরম লাগতে পারে।গর্ভকালীন সময়,মাসিক পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে এবং হঠাৎ করে এই গরম অনুভব করতে পারে যে কোন নারী।

কি ধরনের খাবার খেলে গরম বাড়ে

অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি?এ সম্পর্কে জানতে হলে আগে আপনাকে জানতে হবে কি ধরনের খাবার খেলে গরম বাড়ে।সাধারণত যেসব খাবার খেলে হজম হয় না বা হজম হতে বেশি টাইম লাগে,সেসব খাবার খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীরের মধ্যে গরম অনুভুতি হয়।যেসব খাবারে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এমন খাবার আমাদের কম খাওয়া উচিত।চলুন এবার জেনে নেই গরমের সময়ে কি ধরনের খাবার কম খেতে হবে।



  • মসলা জাতীয় খাবার: মানুষের শরীরের ভেতরকে গরম করে তুলে বিভিন্ন ধরনের মসলা জাতীয় খাবার।আমরা বেশিরভাগ সময়ই রান্নাবান্নায় মসলা ব্যবহার করে থাকি।ফলে আমাদের প্রতিদিনই মসলা খাওয়া হয়ে থাকে।যেসব মসলা খেলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে তা হল,আদা,জিরা, দারুচিনি ও গোলমরিচ।সকলের উচিত রান্নায় যতটা পারা যায়,মসলা কম ব্যবহার করা।
  • ডিম: আমরা সকলেই জানি ডিম অত্যন্ত উপকারী ও প্রয়োজনীয় খাবার।একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য দৈনিক একটি করে ডিম খাওয়াই স্বাভাবিক।তবে অতিরিক্ত খেলে শরীরে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব ও ঘটতে পারে।তার মধ্যে একটি হলো শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও প্রোটিন থাকে।আর এসবের কারণেই শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন প্রয়োজন বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একটি একটি ডিমের বেশি খাওয়া উচিত নয়। আর গরমে ডিমের ভাজি বা পোচ না খেয়ে ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া ভালো।কারণ ডিম ভাজি বা পোচকরলে এতে তেল থাকে যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
  • তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার: গরমের সময় মাংসের তৈরি বার্গার খাওয়া উচিত নয়।কারণ তেল জাতীয় কোন খাবার শরীরকে গরম করে তোলে।এছাড়াও কাবাব ফেরাইসহ অন্যান্য তেল জাতীয় ফাস্টফুড ও খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।তাহলেই আপনি গরম থেকে সুস্থ থাকতে পারবেন।
  • চা এবং কফি: চা ও কফি খেলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে।তাছাড়া গরমে চিনিসহ চা ও কফি খেলে শরীরের পানি শূন্যতা বেড়ে যায়।যার ফলে মুখমণ্ডল হয়ে যায় রক্তিম।এ কারণে যতটা সম্ভব চা ও কফি থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
  • দুগ্ধ জাতীয় খাবার: গরমের মধ্যে দুধ জাতীয় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।কারণ গ্রুপে জাতীয় খাবারে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত হয়।
  • মধু: মধুর শরীরের জন্য উপকারী।তবে অতিরিক্ত গরমে মধু থেকে সাবধান থাকতে হবে! প্রকৃতিক ভাবে মধু উষ্ণ জাতীয় খাবার।শীতের সময় বা শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা না থাকলে সে ক্ষেত্রে নিয়মিত মধু খাওয়া ভালো কারণ মধু খেলে শরীর উষ্ণ থাকে।উল্টোদিকে শরীর গরম থাকলে একটু বেশি মধু খেলে শরীর আরো গরম হয়ে যায়।
  • তিল: তিলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার,প্রোটিন,ওমেগা 6,কপার ও ম্যাঙ্গানিজের।এটি ব্যাকটেরিয়া ও হজম শক্তি বাড়ায়।প্রদাহ, অথরাইটিস কমাতেও অনেক উপকারী।তবে প্রাকৃতিকভাবে তিল ও একটি উষ্ণ জাতীয় খাবার। যা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
  • সস: সস বিভিন্ন খাবারের সাথে খাওয়া হয়। বিভিন্ন খাবারের সাথে সস দিলে খাবারের স্বাদ বাড়ে। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা কমাতে গরমের মধ্যে সস না খাওয়াই ভালো।কারন শসা থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ও লবণ।
  • শুকনো ফল: শুকনো জাতীয় ফল খাওয়া উচিত নয়।কারণ এতে আরো শরীরের ডিহাইড্রেটেড বা পানি শূন্যতা হয়ে যায়।যেমন: পোলাও,বিরিয়ানি,ভাজাপোড়া এবং কোমল জাতীয় খাবার।
  • আইসক্রিমও কোমল পানীয়: আমরা অনেকেই মনে করি কোমল জাতীয় বা আইসক্রিম খেলে গরম কমে।কিন্তু এগুলো খেলে শরীরের পানি শূন্যতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।জন্যই আইসক্রিম ও কোমল পানিও খেলে মানুষ তৃষ্ণার্ত বোধ করে।

বয়স বেড়ে গেলে গরম বাড়ে

বয়স বেড়ে গেলে গরমের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।আর এই গরমে বয়স্কদের জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। গরমের কারণে তারা আক্রান্ত হতে পারেন ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,হাঁপানি, আর্থ্রাইটিস জড়িত ব্যথায়। তাছাড়াও দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতায় এবং হিট স্ট্রোক বা হজমে সমস্যা হতে পারে।

গরমের বয়স্কদের যেসব সমস্যা দেখা দেয়

  • অতিরিক্ত গরমের কারণে বয়স্করা অনেকেই হিট স্ট্রোকের শিকার হয়।যার ফলে ডায়রিয়া,বমি, এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
  • অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীর থেকে বের হয়ে যায় অনেক পরিমাণে গান।এবং এর সঙ্গে শরীরের প্রয়োজনীয় লবণ বের হয়ে যায়।যার কারণে শরীরে তৈরি হয় ডিহাইড্রেশন।
  • অনেক ধরনের খাবার আছে যা খেলে গরমের কারণে বয়স্কদের পেটে সমস্যা হয়।
  • প্রচন্ড গরমের কারণে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ওয়াশ করে রক্তচাপ আরো বেড়ে যেতে পারে।

তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি

আমরা জেনেছি,অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি এখন সে সম্পর্কে জানব।
  • শরীলের পানি শূন্যতা দূর করতে অতিরিক্ত পানি বা সর্বজাতীয় কিছু পান করতে হবে এবং বাহিরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই শরবত বা স্যালাইন বোতলে বহন করতে হবে।
  • রোদ দিয়ে চলতে ছাতাযুক্ত স্থান দিয়ে চলাফেরা করতে হবে।
  • ভারী এবং কালো রংয়ের কাপড় পড়া যাবে না।পাতলা কাপড় পড়তে হবে।
  • খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের হওয়া যাবে না।কিসের ভাবে যাদের লিভার কিডনির স্থায়ী রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে বাহিরে বের হওয়া উচিত নয়।
  • সাধারণত ভাবে সকাল ১১ টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে।তাই এই সময়ে বাহিরের কাজ কম করার চেষ্টা করতে হবে।
  • একটানা রোদের মধ্যে কাজ করা উচিত নয়।কাজের মধ্যে কিছু সময় পর পর ছাইয়া যুক্ত জায়গায় বিশ্রাম নেয়া উচিত।
  • বারবার পানি পান করতে হবে।হালকা লবণের পানি বা স্যালাইন যুক্ত পানি এ সময়ে খুবই উপকারী।
  • রাস্তায় বা ফুটপাতে অপরিষ্কার ও নোংরা জনিত পানি,শরবত,চা বা অন্যান্য খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়।
  • যাদের দিনে ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে,তারা এই সময়টা পরিবর্তন করে সন্ধ্যা বা রাতে ব্যায়াম করতে পারেন।
  • যাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি।তারা প্রতিদিন গোসল করার অভ্যাস করতে পারেন।
  • প্রচুর পানি ও লবণ আছে এমন খাবার খাওয়া উচিত।যেমন: তরমুজ,ডাব,পাকা কলা,শসা।
  • গরম কমাতে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।

গরম বেশি লাগলে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত

আগের পর্বে আমরা জেনে গেছি অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি।এখন আমরা জানবো গরম লাগলে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত।গরমের কারণে আমাদের শরীর থেকে যে লবণ পানি বের হয়ে যায়।তার গাট্টি পূরণ করতে অতিরিক্ত তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।



  • গ্রীষ্মকালীন ফল দিয়ে তৈরি জুস,লবণ- চিনির শরবত,স্যালাইনের পানি এরকম খাবার খেতে হবে।
  • ঝিঙ্গে,চাল কুমড়া,লাউ,চিচিঙ্গা,সজনে ডাটা পাতলা ঝোল করে রান্না করে খেলে শরীরের গরম অনেকটা কম অনুভব করা যায় এবং এগুলো খেলে পেট ভালো থাকে।
  • অতিরিক্ত গরমের জন্য কাঁচা আমের শরবত খেতে পারেন।কাঁচা আমের শরবতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।প্রতিদিন টক দইয়ের শরবত খেতে পারেন।কাঁচা দইয়ের শরবতে পাকস্থলী সুস্থ রাখে।
  • এছাড়াও সব পাতলা করে খেলে তা শরীরের জন্য অনেক উপকারে আসে।

লেখক এর শেষ মন্তব্য

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি এ সম্পর্কে আমরা জেনে গেছি।আমাদের সকলের উচিত যেসব খাবার খেলে অতিরিক্ত গরম বাড়ে সে সকল খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখা।এবং গরম হলে যে ধরনের খাবার খাওয়া উচিত তা নিয়মিত খাওয়া।


অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ কি এবং তীব্র গরম কমাতে করনীয় কি? এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে তবে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন।

Comments

Popular posts from this blog

সুন্দরবন হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং করার নিয়ম সম্পর্কে জানুন -২০২৪

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অনলাইনে টিকিট কাটা - ভ্রমণ করার সকল নিয়ম

মুক্তা চাষ কিভাবে করবেন এবং মুক্তা চাষের জন্য কোথা থেকে প্রশিক্ষণ নিবেন