আমরা অনেকেই হয়তো জানি না কুকুরে কামড় দিলে প্রথমিকভাবে কি করা উচিত।রাস্তায় চলাফেরার সময় আমাদের সামনে অনেক কুকুরই দেখা যায়।সব কুকুর যে আপনাকে আক্রমণ করবে এমনটা নয়।রাস্তায় চলাফেরার সময় কুকুরের গতিবিধি লক্ষ করুন।অনেকে মনে করেন সব কুকুরে আক্রমণ করে। অনেকে কুকুরকে ডিল বা লাঠি দিয়ে আঘাত করে।আসলে কুকুরের সাথে আমাদের এমনটা করা একদমই উচিত নয়।
আমরা ছোটবেলায় অনেকেই শুনেছি কুকুরে কামড় দিলে নাভির গোড়ায় ১৪ টি ইঞ্জেকশন দিতে হয়।না দিলে জলাতঙ্ক রোগ হয়।আসলেই কি এগুলো সত্যি।আজকে আমরা জানবো কুকুরে কামড় দিলে প্রথমিকভাবে কি করা উচিত?কুকুরের নখের আচরে কি রোগ হয়?কুকুরে কামড়ানো প্রাণী খাওয়া যাবে কি না?কুকুরে কামড় দিলে কি করতে হবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ভূমিকা
এদেশে এমন মানুষ বহু খুঁজে পাওয়া যাবে যারা কুকুর দেখলে ভয় পান।অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার একটাই কারণ যদি কুকুর কামড়ে দেয় ! কিন্তু অনেকেই আমরা জানি না প্রকৃতপক্ষে কুকুর কেন কামড়ায়? কুকুর যদি কোন কারনে মানুষকে হুমকি স্বরূপ মনে করে,তাহলেই কামড়ানোর প্রশ্ন আসে। কুকুর নিতান্তই নিরীহ প্রাণী।অনেকেই কুকুরকে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করার কারণে কুকুরের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন।কুকুরের সাথে মানুষ খারাপ আচরণ করে বলেই কোন কোন কুকুর মানুষকে কামড়াতে বাধ্য হয়।
কুকুরে কামড় দিলে প্রথমিকভাবে কি করা উচিত
- কুকুরে কামড় দিলে প্রথমেই রক্তপাত বন্ধ করতে হবে।
- কুকুরটিকে শীঘ্রই ধরার চেষ্টা করুন এবং কুকুরটি যদি অন্যদের হয়।তাহলে তার ঠিকানায় নিয়ে গিয়ে তাদেরকেও সতর্ক থাকতে বলুন।
- ক্ষতস্থানটি পাঁচ মিনিট ধুইতে হবে।এক্ষেত্রে কলের পানি দিয়ে ধোয়া ভালো।যদি কলের পানিতে সহজলভ্য মনে না হয় তাহলে আক্রান্ত স্থানটি পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন এবং পানি বারবার পরিবর্তন করতে থাকুন।এক্ষেত্রে গ্লবস পরে নিতে পারেন।এভাবে ক্ষতস্থানটি বারবার দিতে থাকলে কুকুরের লালা সম্পূর্ণভাবে দূর হবে।
- যদি কুকুরের আচড়ে হালকা কেটে যায় এবং রক্তপাত হয়।তাহলে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ক্ষত জায়গা চেপে ধরে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে।যদি সম্ভব হয় আক্রান্ত স্থানটি হার্টের চেয়ে উপরের দিকে উঠিয়ে রাখুন।এর ফলে রক্তপাত সহজেই বন্ধ করা সম্ভব।
- জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিন,এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারের শরণাপন্ন করুন।
- আক্রান্ত ব্যক্তি যদি তার ৮ বছরের টিটেনাসের ইনজেকশন না দিয়ে থাকে।তাহলে অতি শীঘ্রই টিকা নিতে হবে। যেকোনো ধরনের কামড়েই টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এতক্ষণে আমরা জেনে গেছি কুকুরে কামড় দিলে প্রথমিকভাবে কি করা উচিত।এখন আমরা আরো কিছু পরামর্শ জানবো।
- কামড়ের তীব্রতা দেখার পরে ডাক্তার চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন।যেমন- কামড়ের স্থানটি শুধু পরিষ্কার রাখলেই হবে নাকি টিকা বা ইনজেকশন দিতে হবে।
- হালকা আচড় দিলে সে ক্ষেত্রে টিকে নিয়ে আয় সবচেয়ে ভালো হবে।আর যদি কুকুর কামড় দেয় এবং সেটি যদি খুব মারাত্মক হয়।সেক্ষেত্রে অ্যান্টি-র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিন পরামর্শ দেয়া হয়।
- কুকুরে কামড় দেয়ার পর জ্বলাতক থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র সঠিক উপায় হচ্ছে টিকা নেয়া।এবং ইমিউনোগ্লোবিন ইনজেকশন নেয়া।যেহেতু জলাতঙ্ক একটি বাইরের জনিত রোগ তাই এন্টি ব্যাকটেরিয়া নতুন ব্যবহার করলে কোন উপকার আসে না।ইনফেকশন না বাড়ানোর জন্য অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।যদি সময় মতো চিকিৎসা না করানো হয় সেক্ষেত্রে কুকুরের কামড়ে মৃত্যুও হতে পারে।তাছাড়া জলাতক সহজেই নিরাময় করা যায় না।তাই অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
এখন আমরা জানবো কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়।টিকা নেয়ার আগে কিছু বিষয় জেনে নেই-
- প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে কুকুরটি টিকা দেয়া আছে কিনা।কুকুরটিকে যদি জলাতঙ্কের টিকা দেয়া থাকে,তাহলে আপনার টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে।
- ছোটখাটো আচড়ের ক্ষেত্রে টিকাি নেয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে,তবে যদি গুরুতর কামড়ায় সেক্ষেত্রে টিকা নেয়া উচিত।
- আপনি জদি জলাতঙ্কের টিকা আগে নিয়ে থাকেন,তাহলে আপনাকে পুনরায় টিকা নেয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে।
তবে সবকিছুর ক্ষেত্রেই অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
জলাতঙ্কের টিকা নেয়ার ধরণ ও ডোজ
- জলাতঙ্ক হলে দুই ধরনের টিকা দেয়া যায়।মাংসপেশিতে একভাবে দেয়া যায় এবং অন্যটি চামড়ায় দেয়া যায়।যদিও কম খরচের কারণে অশিক্ষিত জনবলের অভাবে মাংসপেশির টিকাই বেশি প্রচলিত তবে কার্যকারের দিক দিয়ে চামড়ায় দেয়ার টিকা কার্যকারিতা বেশি।আগে কখনো টিকা দেয়া হয়নি বা গত পাঁচ বছরে টিকা দেয়নি এমন ব্যক্তি বা শিশুর জন্য ০,৩,১৪, ও ২৮ তম দিন।আরেকটি নিয়ম হচ্ছে ০ তম দিনে দুই বাহুতে ২টি টিকা দিতে হবে এবং ৭ ও ২৮ তম দিনে ১টি করে টিকা দিতে হবে।
- পশু আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে অন্তত 24 ঘন্টার মধ্যেই টিকা নেয়া উচিত।
- যদি কোন সমস্যার কারণে ইমিউনোগ্লোবিন পাওয়া না যায় তাহলে০ তম দিনে দুই বাহুতে২ টিকা নিতে হবে।৩,৭,১৪,২৮তম দিনে দোষগুলো পূর্ণ করতে হবে।
- পাঁচ বছরের মধ্যে টিকা নেয়া থাকলে।সে ক্ষেত্রে০ ও তৃতীয় দিনে শুধু বুস্টার টিকে নিলেই হবে।
কুকুরের নখের আচড়ে কি রোগ হয়
কুকুরে আচড় দিলে hydrophobia বা জলাতঙ্ক রোগের সম্ভাবনা থাকে।যারা তাদের এখনো কোনো চিকিৎসা তেমন আবিষ্কৃত হয়নি এবং জলাতঙ্কের শেষ পরিণতি মৃত্যু হতে পারে।সে ক্ষেত্রে কোন কুকুরে কামড় দিলে যত সম্ভব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।জলাতঙ্ক মস্তিষ্কের এমন একটি অসুখ যেটা প্রতিরোধের জন্য কোন ধরনের অবহেলা করা উচিত না।
কুকুরের নখের আচড় লাগলে করণীয় কি
কুকুরের নখের আচর লাগলে করণীয় কি?এ সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে কুকুরে কামড় দিলে প্রথমিকভাবে কি করা উচিত?সাধারণত পোষা প্রাণীগুলো তার মনিবদেরকে কামড়ায় না।কিন্তু কখনো কখনো কুকুর বা বিড়াল তাদের যারা আদর করে খাওয়ান,কোলে নিন এবং বাহিরে হাঁটতে বের হন তাদেরকে আঁচড় দিতে পারে।যখন মানুষকে কুকুর আঁচড় দেয়,তখন পরিস্থিতি এবং প্রসঙ্গিক বোঝা খুবই অপরিহার্য।যদি একটি কুকুর খেলার ছলে বা তার প্রিয় মানুষের সাথে আলাপ-আলোচনার সময় মানুষদেরকে আঁচড় দিয়ে থাকে।
তবে এটিকে কোন সাধারণ বিপদের কারণ মনে করা যাবেনা।কুকুর প্রায়স ময়ই তাদের খেলার সময় থাবা দিয়ে থাকে।যদি কোন কুকুর আক্রমণাত্মকভাবে মানুষকে আচড় দেয় তবে আচড়টি মোকাবেলা করা গুরুত্বপূর্ণ।ছোটখাটো আঘাতগুলো সেরে উঠতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহল বা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া।এটি ব্যবহার করলে আঘাত ভালো হয়ে যাবে।কুকুর কামড়ালে কি কি খাওয়া যাবে না।কুকুর কামড়ালে কি কি খাওয়া যাবে না এটা জানার ইচ্ছা অনেকেরই আছে।
কুকুরে কামড়ানোর পরে রোগীরা জলাতঙ্ক হওয়ার ভয়ে কোন খাবারে খেতে চায় না।বিশেষ করে জলাতঙ্ক রোগীরা পানি পান করতে চায় না।জল বা প্রাণী তাদের কাছে নিয়ে আসলে এবং তারা জল বা পানি দেখলে অস্বাভাবিকভাবে আচরণ করেন।যাতে জলাতঙ্ক হয়ে মৃত্যুবরণ না করতে হয় সেজন্য কুকুরে কামড়ে দেয়া ব্যক্তিকে Anti-rabies vaccincei দেয়া হয়।কুকুরে কামড় দেয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেয়ার বিকল্পে আর কিছুই নেই কুকুরের কামড়ালে সব ধরনের খাবারই খাওয়া যাবে।এতে কোন রোগের সমস্যা হবে না।
কুকুরে কামড়ানো প্রাণী খাওয়া যাবে কি
আমরা জেনেছি কুকুরে কামড় দিলে প্রথমিকভাবে কি করা উচিত।এখন জানবো কুকুরে কামড়ানো প্রাণী খাওয়া যাবে কি? এ সম্পর্কে।কোন প্রাণীকে কুকুর কামড় দিলে তা খাওয়া যাবে না বলেই মনে হয়।না খাওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরা হলো:
- কুকুরে কামড়ানো প্রাণী অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় মাংসে সুস্বাদু থাকে না।যা শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
- কুকুরের কামড়ানো প্রাণী খেলে পুকুর থেকে অনেক জীবাণু শরীরের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারে।যা আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
- তবে কারো কারো মতে কুকুরে কামড়ানো পশুকে জলাতঙ্ক রোগের ইনজেকশন দেয়ার পর ওই পশুর গোস্ত খাওয়া যাবে।
লেখক এর শেষ মন্তব্য
কুকুর একটি শান্ত সৃষ্ট প্রাণী।তবে অনেক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে গেলে কুকুর কামড় দেয়।কোন ভাবে যদি আপনাকে কুকুর কামড় দেয় তাহলে একদম সময় নষ্ট না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে ও ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।আজকের আর্টিকেলটি ছিলো কুকুরে কামড় দিলে প্রথমিকভাবে কি করা উচিত।এ বিষয়ে যদি আপনার আরো জানার থাকে।তাহলে এই পোষ্টের নিচে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন।
কুকুরে কামড় দিলে প্রথমিকভাবে কি করা উচিত এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে তবে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবীদের মাঝে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন।
Comments
Post a Comment