Skip to main content

চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন জেনে নিন

২০২২ গৃহ গণনা ও জনসুমারী অনুযায়ী দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ প্রায়।এর মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কিছুটা বেশি।বাংলাদেশের ৫০ টি জাতিসত্তার মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা বেশি।আজকের আর্টিকেলটি হল চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন চাকমাদের প্রধান খাদ্য  সম্পর্কে।



এখানে চাকমাদের সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।যেমন চাকমাদের ঘরবাড়ি কিভাবে তৈরি করতে হয় এবং চাকমাদের ধর্মীয় উৎসব কিভাবে পালন করে। চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে হলে এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি  আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

 ভূমিকা

চট্টগ্রামে বসবাসকারী বিভিন্ন ভাষাবাসির মধ্যে অন্যতম হলো চাকমা জনগোষ্ঠী।চাকমারা হলো বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী।এরা ঘরবাড়ি সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করে। চাকমা সম্প্রদায় হল পিতৃ প্রধান।চাকমাদের প্রিয় একটি খাবারের নাম হল নাপ্পি,যেটাকে চাকমা ভাষায় বলা হয় সিদল।

চাকমা সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য

চাকমা বা চাঙমা বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হল চাকমা।বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ হল চাকমা সম্প্রদায়।এটি মঙ্গোলিও জাতির একটি শাখা।তাদের নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে।
চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন এর জন্য নিজেদের একটি ভাষা রয়েছে। এরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় নিজেদের ‘চাঙমা’ বাসায় কথা বলে।বিভিন্ন উপজাতির নির্দিষ্টিরা চাকমাদেরকে বিভিন্ন নামে ডাকে।চাকমাদের কয়েকটি পাড়া নিয়ে গঠিত হয় একটি গ্রাম ।এরা ঘর সাজাতে পছন্দ করে।

চাকমাদের বাড়ি কি দিয়ে তৈরি

চাকমাদের ঘরগুলো বেশ সাজানো গোছানো হয়ে থাকে।চাকমাদের ঘর নির্মাণের কাজগুলো সবার থেকে একটু ভিন্ন।এরা মাটি থেকে শুরু করে ছয় ফুট মাচার উপরে ঘর নির্মাণ করে থাকে।এদের ঘর নির্মাণ কাজগুলো খুব সুন্দর।চাকমারা বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি করে থাকে।মাচার উপরে ঘরে উঠার জন্য তারা কাঠ  দিয়ে সিডি তৈরি করে থাকে ।এবং এই সিডির মাধ্যমেই তারা উপরে উঠে।

চাকমাদের প্রধান খাদ্য কি

চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন এর ক্ষেত্রে যেসব ঐতিহাসিক খাবার খেয়ে থাকেন,তার মধ্যে একটি হল বাসের অঙ্কুর।বাসের অঙ্কুর খাবারটিকে তারা ’বাচ্ছুরী’ নামে ডাকে।চাকমাদের প্রধান খাদ্য হলো ভাত।এছাড়াও তারা ভুট্টা, শাকসবজি ,সরিষা খেয়ে থাকে।তাদের আরো একটি প্রিয় খাবার হলো নাপ্পি, চাকমা ভাষায় এটাকে বলা হয় সিদল।এটি সাগরের চিংলিশ  মাছ,মুলা,বেগুন আরো বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে বানানো হয়।এছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে।

চাকমা ধর্মের ধর্মীয় উৎসবগুলো কি কি

চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন গড়ে তুলতে তারা ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকেজাতিগতভাবে চাকমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব হল বিজু উৎসব।এ উৎসবটি পালন করা হয়ে থাকে নতুন বছরের প্রথম দিন ও বাংলা বছরের শেষ দুই দিন। ফুল ভিজু বলা হয় বাংলা বছরের শেষ দিনের আগের দিনকে।এবং মূল বিজু বলা হয় শেষ দিনকে।


এই উৎসবে তারা ফুল দিয়ে ঘরবাড়ি সাজায় এবং সবাই নতুন পোশাক পড়ে।বিশেষ করে ছেলেরা নুতন পোশাক পড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে থাকে।সবাই বৃদ্ধাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেয়।এবং সবাই বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে খাবার দান করে ও ভালো কাজ করে।এই দিনটিতে পাঁচ থেকে শুরু করে ৩২ রকমের সবজি মিশিয়ে রান্না করা হয়ে থাকে।

চাকমা পরিবারের প্রধান কে

নিজের নিজের পরিচয়ে হয় একটি সার্কেল।চাকমা সম্প্রদায়ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল।এবং চাকমাদের প্রধান হলো চাকমা রাজা।বংশানুক্রমে চাকমা সমাজের রাজার পদবী হয়ে থাকে।চাকমা পরিবার হলো পিতৃতান্ত্রিক। চাকমা পরিবারের পিতার পরে যাদের স্থান থাকে তারা হলেন মা এবং জ্যেষ্ঠপুত্র।

চাকমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক পোশাকের নাম কি

চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন সুন্দর রাখতে কিছু ঐতিহাসিক পোশাক পড়ে থাকেনচাকমা মেয়েদের পোশাকের নাম কে বলা হয় পিনন-হাদি।পোশাকটি দুই অংশ বিশিষ্ট হয়ে থাকে। উপরে আচল হিসেবে ব্যবহার করা অংশটুক কে বলা হয় হাদি। আর নিচে ব্যবহার করা অংশটুকুকে বলা হয় পিনন।এবং নকশা দিয়ে তৈরি করা শাড়ি ব্যবহার করে থাকে পিনন শাড়ি নামে।চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজেদের পোশাক নিজেরাই তাতে তৈরি করে থাকেন।চাকমা ছেলেদের পোশাক হলো লুঙ্গি শার্ট ও প্যান্ট। চাকমাদের পূর্বপুরুষ ছেলেরা পোশাক হিসেবে ব্যবহার করত মাথায় পাগড়ি গামছা মোটাসোতার জামা ও ধুতি।

চাকমা সম্প্রদায়ের সমাজের কুসংস্কার

অনেকের মতে চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপনে এখনো অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে।চাকমা সম্প্রদায়ের অনেকেই বিশ্বাস করে দৈত্য দানব বলতে কিছু একটা আছে।তারা আরও বিশ্বাস করে যে,ঝাড় ফুকের মাধ্যমে রোগ মুক্তি পাওয়া যায়।যা আধুনিক সমাজের সাথে অত্যন্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ।তবে সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাথে কুসংস্কার কমতে শুরু করেছে।

চাকমা সম্প্রদায়ের অন্তেষ্টিক্রিয়া

চাকমাদের মধ্যে যারা পূর্ণবয়স্ক হয়ে মারা যেত তাদেরকে মৃত্যুর পরে পুড়িয়ে ফেলা হতো।এবং এর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শিশুদেরকে কবর দেয়া হতো।



প্রতিটি গ্রামেই আলাদা আলাদা করে শ্মশান ছিল মৃত্যু দেহ পোড়ানোর জন্য।গরিব ধনী ব্যক্তির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ব্যতিক্রম ছিল।কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যু ব্যক্তিদেরকে স্মরণ করে স্মৃতিসৌধ উঠানো হয়ে থাকে।

লেখকের শেষ মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায় যে উপজাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট উন্নতশীল হলো চাকমা সম্প্রদায়।চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন হল যথেষ্ট মানসম্মত ও আধুনিক। 

চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাপন এই সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়া শেষে যদি কোন অংশে ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনার পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন।

Comments

Popular posts from this blog

সুন্দরবন হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং করার নিয়ম সম্পর্কে জানুন -২০২৪

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অনলাইনে টিকিট কাটা - ভ্রমণ করার সকল নিয়ম

মুক্তা চাষ কিভাবে করবেন এবং মুক্তা চাষের জন্য কোথা থেকে প্রশিক্ষণ নিবেন