ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলের একটি ভাইরাস সংক্রমণ।এর সংক্রমণটি মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত শহর অঞ্চলে বেশি দেখা দেয়।বর্তমানে বাংলাদেশের বাড়ছে এরিস বাহিত ডেঙ্গু জ্বরের আক্রমণের সংখ্যা।ডেঙ্গুর আক্রমণে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।অনেকের মনে এই ডেঙ্গু সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে।তাই আজকের আর্টিকেলটিতে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি প্রশ্নের উত্তর ও শিশুদের ডেঙ্গু কিভাবে বুঝবেন এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের করণীয় কি? তুলে ধরা হলো।
এক জীবাণুবাহী মশার নাম।ডেঙ্গুজাকে শুধুমাত্র ভাইরাস দেওয়ার পরে উপেক্ষা করা ঠিক নয়।কারণ দুটি একে অপরের থেকে আলাদা হলেও ডেঙ্গু তুলনামূলকভাবে ভয়ংকর।আজকে আমরা আলোচনা করব ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে কিছু সতর্ক চিহ্ন? ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি প্রশ্নের উত্তর ও শিশুদের ডেঙ্গু কিভাবে বুঝবেন এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের করণীয় কি?সে সম্পর্কে।ডেঙ্গু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
.
ভুমিকা
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ভাইরাস জনিত হয়ে থাকে।ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ হল—-জ্বর।ডেঙ্গু হলে ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বরের তাপমাত্রা থাকতে পারে।বাংলাদেশের চলতি বছর গুলোতে আক্রমণ রোগীদের সংখ্যা বেশি।টানা ৫৬ বছর ধরে বাংলাদেশে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু রোগ অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে।সম্ভাবনার কারণ এই নয় যে বাচ্চাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
ডেঙ্গু হলে বাড়িতে কি করতে হবে
- রোগীর পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে
- প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
- ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে।স্বাভাবিক ওজনের একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ টি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি হার্ট, লিভার এবং কিডনিতে সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রের প্যারাসিটামল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার পরে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন,ক্লোফেনাফ,আইবুপ্রোফেন–এই ধরনের ঔষধ খাওয়া যাবেনা।
ডেঙ্গু হলে যেই কাজগুলো করা যাবে না
- ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেটকে এখন মূল বিষয় হিসেবে ধরা হয় না।তাই প্লাটিলেট নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
- প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে বা শরীরের কোন জায়গা থেকে রক্তপাত হলে সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী শরীরে রক্ত দেয়া যাবে।তবে এ ধরনের সমস্যা খুবই কম দেখা যায়।
- অনেকের মতে পেঁপে পাতার রস বা জুস খেলে প্লাটিলেট বাড়ে।কিন্তু এসব কথার কোন ভূমিকা নেই।জ্বর থেকে সেরে ওঠার পর আপনার থেকেই প্লাটিলেট বাড়তে শুরু করবে।
- জ্বরের শেষের দিকে রক্তনিম্নচাপ হতে পারে।মাড়ি, নাক ও মলদ্বার থেকে রক্তপাত হতে পারে।সে ক্ষেত্রে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে কিছু সতর্ক চিহ্ন জেনে নিন
- তীব্র পেটে ব্যথা থাকবে
- দিনে তিনবারের বেশি বমি হতে পারে
- দিনে তিনবারের বেশি ডায়রিয়া হতে পারে
- শরীরের কোথাও পানি জমার চিহ্ন দেখা যেতে পারে। যেমন- পেট ও পায়ের গোড়ালির উপরের দিকে।দাঁতের মাড়িতে,ঠোঁটে ও জিব্বায় রক্ত ক্ষরণের চিহ্ন দেখা যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং অস্থিরতা লাগে।
- রক্তের হেমাটোক্রিটের মাত্রা বৃদ্ধি ও প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যায়।
ডেঙ্গু হলে যারা বাড়িতেই চিকিৎসা নিতে পারবেন
- যাদের মুখের রুচি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো থাকবে এবং পরিমাণ মতো খেতে পারবে।
- যদি পর্যাপ্ত প্রস্রাব হয় ও শরীরের কোন অংশ থেকে রক্তপাত না হয়।
- রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে থাকলে ও নাড়ির গতি স্বাভাবিক থাকলে।
- শ্বাসকষ্টের সমস্যা না হলে।
- পেটে ব্যথা না থাকলে ।
- শরীরে লালচে দানা দেখা না দিলে।
- পেটে বা পায়ের গোড়ালির উপরে পানির চিহ্ন দেখা না দিলে।
- রোগীর মানসিকতা ঠিক থাকলে।
- হেমাটোক্রিটের মাত্রা না বাড়লে।
ডেঙ্গু কোন অঞ্চলে বেশি হয়
ডেঙ্গু নামক এই ভাইরাসটির সংক্রমণ জড়িত একটি রোগ।যা সাধারণত স্ত্রী মশা থেকে মানবদেহে আসে।ডেঙ্গু সংক্রমণটির জন্য চার ধরনের ভাইরাস দায়ী।প্রধানত বাংলাদেশ,ভারত ও সিঙ্গাপুরের মত গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশ বা অঞ্চলগুলোতে এই রোগটি দেখা যায়।যে দেশের জলবায়ু গ্রীষ্মকালীন প্রভাব বেশি সেই অঞ্চলগুলোকে গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চল বলে।এই দেশগুলোতে বা অঞ্চলসমূহের শহর এবং উপসহ গুলোতে ডেঙ্গুর সক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন, বর্ধমানের প্রতিবছর বিশ্বে ১০ থেকে ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রমণ হয়।পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে কিছু জরুরী তথ্য আপনিও জেনে রাখুন
- ডেঙ্গু জ্বরের শুরু থেকেই চিকিৎসা নেয়া জরুরি।চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হলে জীবন সংশয় এর কারণও হতে পারে এই ডেঙ্গু জ্বর।ডেঙ্গু রোগীদের মৃত্যুর মূল কারণ হলো হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছে অতি দ্রুত না নিয়ে যাওয়া।তাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে দেরি না করে জ্বর হওয়ার প্রথম বা দ্বিতীয় দিন হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।শিশু,বয়স্ক,গর্ভবতী নারী,ডায়াবেটিস,হৃদরোগ,উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনিতে সমস্যা জনিত রোগীদের জন্য আরও তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
- আমাদের অনেকেরই ধারণা আছে যে, ডেঙ্গু হলে তিন দিনের আগে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা করানো যায় না।এই কথাটি একদমই ভুল।ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা জ্বর আসার প্রথম দিনেই করানো যায় এবং ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা প্রথম দিনেই শনাক্ত করা যায়।
- ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।রোগীর জ্বর ভালো হওয়ার ৪৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত কে বলা হয় সংকটকাল।কারণ ডেঙ্গুজনিত বিভিন্ন সমস্যা এর সময়ের মধ্যে হতে পারে।তাই জ্বর সেরে যাওয়া পরে,অন্য কোনো জটিলতায় যে পড়তে হবে না,এমনটি নিশ্চিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন
১. ‘ডেঙ্গু মশা’ কামড় দিলে কি ফুলে যায়
যদিও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার নাম এসি এজিপ্টি।সাধারণ মানুষের কাছে এই মশা ‘ডেঙ্গু মশা নামে ’ পরিচিত।এমনকি সাধারণ মানুষরা গুগলে সার্চ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ‘ডেঙ্গু মশা’ নামে সার্চ দিয়ে থাকে।ভাইরাস বাহি এই মশা কামড় দিলে,ওই স্থানটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফুলে যায় এবং ফুলে যাওয়া স্থানটি চুলকায়।অনেকের ক্ষেত্রে এডিস মশায়ের কামড় দিলে ফুলে যাওয়া কিংবা চুলকানি নাও হতে পারে।মশা রক্ত খাওয়ার জন্য যখন হুল ফোটায় তখন অনেক মানুষই তা টের পায় না।
যার ফলে মশা কামড় দেওয়ার আগে মানুষের ত্বকের উপরে কিছুটা ব্যাথা নাশক গণতরল ছড়িয়ে দেয়।এতে কিছুক্ষণের জন্য মানুষের ত্বক অবশ হয়ে থাকে।কিছুক্ষণ অবস হয়ে থাকার পর যখন মানুষ টের পায়, তখন ওই জায়গাটা একটু ফুলে ওঠে ও চুলকায়।একজন কীট তত্ত্ববিদ বলেছেন, ‘এডিস মশায়’ কামড় দেওয়া অংশটি একটি মোটর দানা বা তার চেয়েও কম অংশ নিয়ে ফুলে উঠতে পারে।বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, মশার কামড় থেকে বাঁচতে হাত-পা ঢেকে রাখতে হবে।
এছাড়াও দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।দরজা জানালায় মশার প্রতিরোধ করার নেট,স্প্রে,ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।মশা তাড়ানোর জন্য অ্যারোসল,কয়েল,ধুপ,ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।এক সময় মানুষ বলতো ‘ডেঙ্গু মশা’ শুধু দিনে কামড়ায়।‘এডিস মশা’ সম্প্রীতি তাদের চরিত্র বদলেছে।এখন ‘এডিস মশায়’ দিনে ও রাতে সব সময়ই কামড়াতে পারে।তবে বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে সেক্ষেত্রে ‘এডিস মশায়’ কামড়াতে পারে।
২.ডেঙ্গু মশা চেনার উপায় কি
অনেকেই জানার আগ্রহী যে, ডেঙ্গু মশা চেনার উপায় কি? বা ‘এডিস মশা’ দেখতে কেমন প্রকৃতির হয়ে থাকে।একজন তত্ত্ববিদ বলেছেন, একটি ‘ডেঙ্গু মশা’ খালি চোখে ও শনাক্ত করা সম্ভব।তিনি আরো জানিয়েছেন, এই মশা দেখতে মাঝারি ধরণের হয়ে থাকে।এদের গায়ে-পায়ে ডোরাকাটা দাগ যুক্ত থাকে।তবে ব্যতিক্রম হল ‘আর্মিগিয়ার’ নামে একটি মশার পেটেও এই ধরনের দাগ দেখা গেছে।এ মশাটি দেখতে আকার একটু বড়।অনেকে এই মশাটি কে অ্যাজিপ্টি বলে।তবে এটি ভুল। আপনাকে ‘এডিস মশায়’ কামড় দিয়েছে কিনা সেটি দেখতে অবশ্যই আপনাকে মশার পায়ের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। ‘এডিস মশার’ পায়েই কেবলমাত্র ডোরাকাটা দাগ থাকে।
৩.মশায় কামড় দিলেই কি ডেঙ্গু হয়
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ড. কবিরুল বাসার জ্বালিয়েছেন,‘এডিস মশায়’ কামড় দিলেই যে ডেঙ্গু হবে বিষয়টা এমন নয়।তবে যেই ‘এডিস মশাটি’ ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করেছে, সেই মশাটি কামড় দিলে আপনার ডেঙ্গু হতে পারে।আবার কোন ‘এডিস মশা’ যদি কোন ডেঙ্গু আক্রমণ করা ব্যক্তির রক্ত পান করে থাকে তাহলে মশা টির মধ্যে ডেঙ্গুর ভাইরাস সংক্রমিত হবে।এরপর ওই সংক্রমণজনিত মশাটি যদি কোন সুস্থ মানুষের শরীরের কামড় দেয় সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে।যেকোনো সাধারণ মশার মতোই ‘এডিস মশাও’ একাধিক ব্যক্তিকে কামড়ায়।তাই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির শরীর থেকে এডিস মশা মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পরে ওই মশা কামড় দিলে ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৪.ডেঙ্গু মশা কোথায় এবং কিভাবে জন্মায়
‘এডিস মশা’ সাধারণত শুকনো ছায়াযুক্ত স্থানে থাকে।এই মশাটি যেকোনো জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে।সাধারণত ভাবে পাত্রের মধ্যে কর্নারের দিকে ডিম পেড়ে থাকে।কীট তত্ত্ববিদ কবিরুল বাসার বলেছেন, জমে থাকা পানি পরিষ্কার কিংবা নোংরা হোক সেটা কোন বিষয় না।পানি কয়েক দিন ধরে একই জায়গায় স্থির থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘এডিস মশা’ ডিম ছাড়তে পারে।এক সময় বলা হত ‘এডিস মশা ’পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে।তবে গবেষণায় এর পরিবর্তন দেখা গিয়েছে।সাধারণত জমে থাকা পানিতে বা সাবান মেশানো দিলে মশার ডিম ধ্বংস হয়ে যাবে।
৫.ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার পর কতদিন থাকে
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে চিকিৎসকবিদদের মতামতে, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দুই ধরনের- ১.ক্যালাসিক্যাল ২.হেমোরেজিক ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হলে সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। সর্বোচ্চ দশ দিন সময় লাগতে পারে।তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে চিকিৎসকরা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর প্লেটলেট তিন দিনের মধ্যেও কমে যেতে পারে।যদিও প্লেটলেট একবার কমার পর সেটি ৪৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে শুরু করে।তবে যদি কেউ ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক সিন্ড্রোমে চলে যায়।সে ক্ষেত্রে রোগীর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে।এক্ষেত্রে একেক রোগীর সেরে উঠতে একেক রকমের সময় লাগে।মস্তিষ্কে সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে এবং লিভার বা কিডনিতে আক্রান্ত হলে সে ক্ষেত্রে সময় অপেক্ষা কৃত কম লাগে।
৬.ডেঙ্গু হলে কি কি টেস্ট করাতে হয়
কারো যদি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয় বা কেউ যদি ডেঙ্গুতে আক্রমণ হয় কিংবা কোন এলাকায় যদি ডেঙ্গুর রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।সে ক্ষেত্রে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে।কেউ ডেঙ্গুতে আক্রমণ হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য সাধারণত রক্ত পরীক্ষা করালেই সনাক্ত করা যায়।জ্বর বা ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৩ দিনের মধ্যে এনএসওয়ান এনটিজেন্ট বা NSI পরীক্ষা করাতে হবে।এর মাধ্যমে ননস্ট্রাকচারাল প্রোটিন দেখা যায়।ক্লাসিক ডেঙ্গু হলে সাধারণত ৬- ৮ হয়ে যায়।রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে NSI পজিটিভ হলে রোগীর ডেঙ্গুও পজেটিভ।
তবে এই টেস্টটি ডেঙ্গু জ্বর দেখা দেওয়ার ৫ দিনের মধ্যে করাতে হবে।এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ সনাক্ত করা যায়।তারপরে এই টেস্টার কার্যকরী হয় না।ডেঙ্গু হওয়ার তিন দিনের মধ্যে এই পরীক্ষাটি করলে সবচেয়ে ভালোভাবে রেজাল্ট দেখা যায়।পাঁচ দিনের পর থেকে করালে এনএসওয়ান নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই ডেঙ্গু হওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরে যদি পাঁচ দিনের বেশি সময় হয়ে যায়,সে ক্ষেত্রে এমএসওয়ান পরীক্ষা করার দরকার নেই।
কারণ পাঁচ দিনের পরে এনএসওয়ান পরীক্ষা করালে কোন লাভ নেই।৫ দিনের বেশি সময় হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আইজিএম,আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট করাতে হবে।যদি এই পরীক্ষাটি আইজিএম পজিটিভ হয়,তাহলে বুঝতে হবে রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে।এর আগে যদি রবি কখনো ডেঙ্গুতে আক্রমণ হয়ে থাকে,তাহলে আই জি জি পজিটিভ হবে।কোন রোগীর যদি আইজিজি এবং আইভিএম দুটি পজিটিভ হয় এক্ষেত্রে তখন বিষয়টা উদ্বেগের।
৭.ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত
ডেঙ্গু হলে রোগীকে সাধারণভাবে নরম জাতীয় খাবার খেতে হবে।সেই সাথে ফলের জুস খেতে হবে,ডাবের পানি,ওরস্যালাইন,স্যুপ বা তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে খাওয়াতে হবে।এগুলো খাওয়ালে রোগীর শরীরের পানি এবং ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে।তবে ডায়বেটিস রোগের আক্রান্ত রোগীদের জন্য কিছু বিধি নিষেধ থাকতে পারে।সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।খাবারের মধ্যে ভারসাম্যতা রাখতে হবে।লিমিট ছাড়িয়ে কোন খাবার খাওয়া যাবে না।আবার কিছু না খেয়ে থাকা ও ঠিক নয় যদি কারো দিনে ৩/৪ ঘণ্টা পরপর প্রস্রাব হয় এবং প্রস্রাবের রং হলুদ না হয়তাহলে তার আদ্রতা ঠিক আছে।
৮.ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু জ্বর কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়।ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত রোগীর পাশে ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহারিত জিনিস ব্যবহার করলে।সেক্ষেত্রে অন্য কারোর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।‘ডেঙ্গু জ্বর’শুধুমাত্র মশার মাধ্যমে ছড়ায়।সুতরাং বুঝতেই পারলেন এটি কোন সোয়াসের রোগ নয়।আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কোন বাধা নেই কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখার কোন প্রয়োজন নেই।
৯.ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো কি
- জ্বর
- শরীরে ব্যথা,পেশিতে ব্যথা,জয়েন্টে ব্যথা,মাথা ও চোখের পিছনে ব্যথা
- শরীরের লালচে র্যাশ বের হওয়া
- ব্যথা হওয়া,পেট ফুলে যাওয়া ও পাতলা পায়খানা হওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া
- কাশি হওয়া
- ক্ষুধামন্দা
- দুর্বলতা হওয়া ও ক্লান্তি লাগা
- শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ
- রক্তচাপ কমে যাওয়া
- পালস রেট বেড়ে যাওয়া
- ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচেতন থাকতে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে
- ঘরের ভিতরে যদি নষ্ট ফুলের টক কিংবা ভাঙ্গা প্লাস্টিকের বোতল,ডাবের খোসা, তাই আর অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
- মশা নিধরনের জন্য সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার স্প্রে বা ফকিং করুন
- এমন ধরনের পোশাক পড়তে হবে যা শরীরের অনেক অংশই ঢেকে রাখা যায়
- জানালায় নেট ব্যবহার করতে পারেন
- হাতে পায়ে বা শরীরে মশারদী ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন
- বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সময় মশা নিধনের ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন
- সন্ধ্যার পর থেকে বাড়ির সকল সদস্যরা মশারি ব্যবহার করতে পারেন
- যেখানে যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে,খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলুন।কারণ বৃষ্টির পানিতে ‘এডিস মশ’ ডিম পাড়ে।
- মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহারের পাশাপাশি মেদ ব্যবহার করতে পারেন
- ‘এডিস মশা’ মূলত দিনের বেলায় কামড়ায়, তাই দিনের বেলা ঘুমালে অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
শিশুদের ডেঙ্গু কিভাবে বুঝবেন এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের করণীয় কি
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো সাধারণত ২-৭ দিন স্থায়ী হয়।অনেক মানসী এক সপ্তাহ পরে সুস্থ হয়ে ওঠে ডেঙ্গু সেরে ওঠার পরেও মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো সাধারণত ৩-১৫ দিন পরে শুরু হয়।শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণ গুলো হল- উচ্চমাত্রায় জ্বর, মাথাব্যথা, ভূমি, পেশি ও জয়েন্ট এর ব্যথা, ত্বকের ফুসকুড়ি হওয়া।সাধারণত ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা এক শতাংশেরও কম।অন্যদিকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর ২.৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়।ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের চিকিৎসা না করানো হলে, সেক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শিশুর ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো
- শিশু যেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত না হয় তা প্রতিরোধ করতে আমাদের দুইটি করণীয় বিষয় আছে।তা হল :
- টিকা দেওয়া।
- বাহকের বিস্তার রোধ করা।
- ভ্যাকসিন বহির্বিশ্বে চলে এসেছে।কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সহজলভ্য হয়ে উঠেনি।তাই মশার বিস্তার রোদে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
- শিশুকে ঘুম পাড়ানোর পর সব সময় মশারি টানিয়ে দিতে হবে।এ সময় শিশুকে এমন পোশাক পড়াতে হবে যাতে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে থাকে।
- বাজারে মশার কামড় নিরোধক বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়।যা শিশুদেরকে ব্যবহার করাতে পারেন।
- ফ্রিজ বা এসির পানি যাতে না জমে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
- সর্বোপরি বাড়ির চারপাশ পরিস্কার রাখুন।এতে আপনার পরিবার ও প্রতিবেশীরাও ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
GAZI MAX IT এর পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি প্রশ্নের উত্তর? এই আর্টিকেলটির মধ্যে থেকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো শিশুদের ডেঙ্গু কিভাবে বুঝবেন এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের করণীয় বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে।আপনার আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন।পরিবেশ পরিষ্কার রাখলে এবং ছোট ছোট বিষয়গুলোতে সচেতন থাকলে ‘ডেঙ্গু’ জ্বর থেকে যেমন মুক্তি পাবেন আপনি।তেমনি আপনার পরিবারের লোক বা আশেপাশের মানুষরাও সুস্থ থাকতে পারবে।এগুলো অবশ্যই আপনাকে মেনে চলতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি প্রশ্নের উত্তর?এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি প্রশ্নের উত্তর? যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে,তবে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবী ও পরিচিতদের মাঝে নিচের 👇 যেকোনো শেয়ার অপশন থেকে,শেয়ার করে দিতে পারেন।আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে 👇 জানিয়ে দিতে পারেন (ধন্যবাদ)।
Comments
Post a Comment