অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে। এপেনডিক্সের অপারেশনে খরচ কত টাকা লাগে? তা আপনি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানতে পারবেন। আসলে আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই পেটে ব্যথা হলে জানতে ইচ্ছে হয় এটা কিসের ব্যথা। আর এসব কারনে আমাদের অনেক টেনশন হয়। আপনার অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে।
আমরা অনেকেই অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি জানতে পারবেন, অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে? এপেনডিক্সের অপারেশনে খরচ কত টাকা লাগে? অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যাথা কমানোর ঔষধের নাম কি? অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কমানোর উপায়? অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ভূমিকা
অ্যাপেন্ডিক্স রোগটি মূলত ১০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অ্যাপেন্ডিক্স কেন হয়? তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। অ্যাপেন্ডিক্স মানে হলো একটি থলির মত মুখ। যা কোন খাবারের টুকরো বা অন্য কোন কারণে আটকে যাওয়ার ফলে সেখানে সংক্রমণ ঘটে এবং জায়গাটি ফুলে উঠে ও ব্যথা হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন এটাই হলো অ্যাপেন্ডিক্স। মানুষের বয়স যতো বাড়তে থাকে, অ্যাপেন্ডিক্স ততো ছোট হতে থাকে। মানে বয়সও বাড়তে থাকে এবং অ্যাপেন্ডিক্সও শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়।
অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কমানোর উপায়
অ্যাপেন্ডিক্স কমাতে মেথি খান: ঘরোয়া উপায়ে বা প্রাকৃতিকভাবে অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কমানোর জন্য মেথি অনেক কার্যকরী। প্রথমতভাবে মেথি ডিসকাস তৈরিতে বাধা দিবে এবং আপনার ব্যথা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। মেথি উপাদানটি তৈরি করার জন্য প্রথমে এক লিটার পানির সাথে দুই চামচ মেথি মিশিয়ে নিয়ে একটি পাত্রে ভালো করে সিদ্ধ করুন। এটি ৩০ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। এরপর ছাকনি দিয়ে ভালো করে ছেকে নিন। এই উপকরণটি দৈনিক ২ বার খেলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। এর পরের স্টেপে আপনার অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিতে পারবেন ৭ লক্ষণে।
- অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কমাতে আদা খেতে পারেন: অনেক রোগের ক্ষেত্রেই আদা অনেক কার্যকরী। তবে অ্যাপেন্ডিক্স এর ক্ষেত্রে একটু অন্য নিয়মে আদা খেতে হবে। আদার সাথে হলুদ এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। সত্যিই এতে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।
- পানি পান করুন: অ্যাপেন্ডিক্স সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
- ভেজা কাপড়ের ব্যবহার: অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা থেকে উপশম পাওয়ার জন্য একটি ভেজা কাপড় পেটে জড়িয়ে দিন এবং এর উপরে একটি শুষ্ক পশমি কাপড় শক্ত করে বেঁধে দিন।
- পুদিনা পাতা: এপেনডিক্স এর ব্যথা কমাতে দৈনিক পুদিনা পাতার রস খেতে পারেন। কয়েক ফোটা রস পানিতে মিশিয়ে তিন চার ঘন্টা পর পর খেতে হবে।
- লেবুর রসের কার্যকারিতা: অ্যাপেন্ডিক্স এর নিরাময়ে লেবুর রসের বিকল্প নেই। লেবুর রস খেলে ব্যথা কমে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। একটি লেবুর রস বের করে নিন এবং এর সাথে সমান পরিমাণে কাঁচা মধু মিশিয়ে দিনে কয়েকবার এই মিশ্রণটি পান করুন। কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত পান করলে আপনি অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা থেকে রক্ষা পাবেন।
- বাদাম তেল: বাদামের তেল অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা ঠেকাতে অনেক কার্যকরী। এই উপকরণটি মালিশ হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথার জায়গায় একটু তেল নিয়ে মালিশ করুন। এতে ব্যথা কমে যেতে পারে।
অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে
পেটে ব্যথাকে আমরা অনেকেই সাধারণ একটি বিষয় মনে করি। আর এই পেটে ব্যথা হতে পারে নানা ধরনের সমস্যার কারণে। পেটে ব্যথা হলে আমরা তেমন কোনো গুরুত্ব দেই না। ফলে এই পেটে ব্যাথা থেকেই ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। আমরা যেন সব ধরনের ব্যথাতেই গ্যাসের ব্যথা ভেবে বসে থাকি। তাছাড়া মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের পিরিয়ডের ব্যথার জন্য অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। হঠাৎ করে যখন বুঝতে পারা যায় এটি একটি অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা। তখন রোগীর অবস্থা আশঙ্কা জনক হয়ে যায়। আপনার অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে-
- অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যাথা মূলত ডান দিক থেকেই শুরু হতে পারে। এই ব্যথা ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন রকমের হতে পারে। অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা শুরু হওয়ার পর নাভির চারদিকে গিরে তলপেটের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
- অনেক সময় অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর তলপেট ফুলে ওঠে। এই ব্যথা শুরুর দিকে কম থাকে এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। খাবার খেলে অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা বেশি বাড়ে।
- অনেক সময় অ্যাপেন্ডিক্স রোগীর গায়ে জ্বর উঠে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে জ্বর হয় না।
- অনেক সময় এপেনডিক্স এর ব্যথা শুরু হয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে এবং এর সাথে মাথা ব্যথাও হয়।
- অনেকের ক্ষেত্রে খাওয়ার রুচি অনেক পরিমাণে বেড়ে যায় আবার অনেকের ক্ষেত্রে কোন কিছু খেতে ইচ্ছে হয় না, হজম শক্তি কমে যায় এবং বমি হয়।
- অ্যাপেন্ডিক্স এর রোগী বেশি সময় হাঁটাচলা করলে, সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা করলে এবং কোন ভারি জিনিস জাগালে বা ভারি জাতীয় কোন কাজ করলে ব্যথা আরো বৃদ্ধি পায়। আপনার অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা সেই ৭ লক্ষণের মধ্যে এটিও একটি অ্যাপেন্ডিক্স এর লক্ষণ
- অ্যাপেন্ডিক্স এর বয়স দীর্ঘ সময় হয়ে গেলে বা কোন কারনে যদি এপেন্ডিস ফেটে যায়, তখন সমস্ত পেট জুড়ে মারাত্মকভাবে ব্যথা হয়। তাছাড়াও পেট ফুলে উঠে। তবে এতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অ্যাপেন্ডিক্স হলে কোন খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে
আমরা অনেকেই জানিনা কোন খাবারের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা আরো বৃদ্ধি পায়। যার ফলে আমরা সব ধরনের খাবারই খেয়ে থাকি এবং এর কারণেই অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা অনেক বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক অ্যাপেন্ডিক্স হলে কোন খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে-
- তেলেভাজা খাবারঃ ডোবা তেলে বাজা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই ধরনের খাবার খেলে অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
- অ্যালকোহল থেকে নিজেকে বিরত রাখাঃ অ্যাপেন্ডিক্স রোগীদের জন্য অ্যালকোহল জাতীয় খাবার অতি জরুরি বন্ধ করতে হবে। যদি আপনি অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা নিয়েও অ্যালকোহল পান করেন, তাহলে আপনার পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
- চিনি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুনঃ যাদের অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা আছে, তারা চিনি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন। এমনিতে যেই ফল জাতীয় খাবার গুলো খেয়ে থাকেন, তাও চিনি জাতীয়। তাই আলাদা করে চিনি খেলে অ্যাপেন্ডিক্স এর সমস্যা বেশি হতে পারে।
- প্রোটিন জাতীয় খাদ্যঃ প্রোটিন জাতীয় খাদ্যগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন বা অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য বলতে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ এগুলো কম পরিমাণে খাবেন। মাংসের ক্ষেত্রে ব্রয়লার মুরগি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়াও অন্যান্য মাংসগুলো কম পরিমাণে খাবেন। আর মাছের ক্ষেত্রে পাঙ্গাস মাছ খেলে অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা বেড়ে যায়।
এপেনডিক্সের অপারেশনে খরচ কত টাকা লাগে
অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কখনো দমিয়ে রাখবেন না। অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলে ভিতরে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ইনফেকশন হওয়ার কারণে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যেতে পারে। এমন কি এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে আপনি আধুনিক রিয়েল হোমিও ঔষধ খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই দক্ষ হোমিও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এলোপ্যাথি ঔষধের ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্স এর কোন চিকিৎসা নেই। ব্যথা কমানোর জন্য আপনি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এর মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন। ঔষধের ক্ষেত্রে এটি স্থায়ী বলে মনে হয় না। তবে দ্রুত অপারেশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এতক্ষণে আপনার অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা তা বুঝতে পেরেছেন ৭ লক্ষণের মাধ্যমে।
এপেনডিক্সের অপারেশনে খরচ কত টাকা বিস্তারিত জেনে নিন
অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করে কেটে ফেলার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে–
- কি-হোল সার্জারি
- ওপেন সার্জারি
- কি-হোল সার্জারিঃ অ্যাপেন্ডিক্স এর অপারেশন করানোর ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে কি-হোল সার্জারি বেছে নেয়া হয়। কারণ এই সার্জারি করার মাধ্যমে রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে এবং রোগী তাড়াতাড়ি তুলনামূলকভাবে হাসপাতাল থেকে দ্রুত ছুটি পেয়ে বাড়ি যেতে পারে। এই অপারেশনটি করার পূর্বে রোগীকে জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে অচেতন করা হয়। অচেতন করার পরে অপারেশনের কাজ শুরু করা হয়। কি-হোল সার্জারির ক্ষেত্রে রোগীর পুরো পেট কাটতে হয় না। তবে পেটে তিন থেকে চারটি ছোট ছোট করে ছিদ্র করা হয়। তারপর এই ছিদ্র দিয়ে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে অপারেশন করা হয়।
- ওপেন সার্জারিঃ অনেক সময় ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে অপারেশন করা যায় না। তখন পেট সরাসরি কেটে অপারেশন করতে হয়। সরাসরি অপারেশন করার নামই হলো ওপেন সার্জারি।
- খরচঃ অ্যাপেন্ডিক্স এর অপারেশন করানোর ক্ষেত্রে ১৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ পর্যন্ত টাকা লাগতে পারে বা তার বেশিও খরচ হতে পারে।
লেখক এর শেষ মন্তব্য
GAZI MAX IT এর পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে? সে সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটির মধ্যে থেকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা না করে, দ্রুত অপারেশনের ব্যবস্থা করুন। অ্যাপেন্ডিক্স এর বয়স বেশি হয়ে গেলে, হয়ে যেতে পারে কোন মারাত্মক ধরনের ক্ষতি। এই রোগের কারণে এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর খুজে পেয়েছেন।
অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে? এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৭ লক্ষণে? এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তবে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবী ও পরিচিতদের মাঝে নিচের 👇 যেকোনো শেয়ার অপশন থেকে শেয়ার করে দিতে পারেন। আজকের আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত বা তথ্য থাকলে কমেন্ট বক্সে 👇 জানিয়ে দিবেন (ধন্যবাদ)।
Comments
Post a Comment