সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়? তা কি আপনি জানেন না। শিশুদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? সেটা না জানার কারণে আপনি কি খুবই চিন্তিত। তবে এতে চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে জানতে পারবেন সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায় সে সম্পর্কে। আপনি যদি এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মেনে কাজ করেন, তবে আমি আশা করছি এই পাসপোর্ট সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্নের সমাধান পাবেন।
আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি জানতে পারবেন সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়? ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম? শিশুদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
.
পাসপোর্ট এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নিন
বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিভিন্ন রঙের পাসপোর্ট হয়ে থাকে। তবে পাসপোর্ট এর রং যেই দেশে যে রঙেরই হোক না কেন, সেটা অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন আইকাও এর কাছ থেকে পাসপোর্ট এর রং এবং নকশা এর ছাড়পত্র নিতে হয়। তবে সাধারণত পৃথিবীতে লাল, নীল, সবুজও কালো এই চার রঙের ভিন্ন ভিন্ন সেড হয়। তবে বাংলাদেশে পাসপোর্ট সাধারণত সকলের জন্যই সবুজ পাসপোর্ট চালু থাকলেও বর্তমানে দেশে আরও দুটি রঙের পাসপোর্ট ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ৩ ধরনের পাসপোর্ট বাংলাদেশে আছে। তা হল সবুজ লাল ও নীল।
সবুজ পাসপোর্ট: ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক সাঈদ বলেছেন, সবুজ পাসপোর্ট এর নাম হলো অর্ডিনারি পাসপোর্ট। “আর এই পাসপোর্ট হলো বাংলাদেশি সকল সাধারণ নাগরিক ও সরকারি চাকরি জীবীদের জন্য। এক্ষেত্রে জন্মসূত্রে এবং বৈবাহিক উভয় সূত্রে বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের জন্য এই সবুজ পাসপোর্ট। তবে সবুজ পাসপোর্ট দিয়ে যদি বিদেশে যেতে চান। সেক্ষেত্রে ওই দেশের ভিসার প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুনঃ ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
নীল পাসপোর্ট: নীল রঙের পাসপোর্ট কে বলা হয় অফিসিয়াল পাসপোর্ট। কোন সরকারি কাজের জন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি দেশের বাইরে ভ্রমণে যেতে চায়। সেক্ষেত্রে এই অফিশিয়াল পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হয়। এই পাসপোর্টে আবেদন করার জন্য সংশ্লেষে সরকারি অফিসের অনুমোদন নিতে হয়। নীল রংয়ের পাসপোর্ট কারীরা অন্তত সাতাশটি দেশে ভ্রমণ করতে পারবে এবং তাতে কোন ভিসার প্রয়োজন হবে না।
লাল পাসপোর্ট: লাল পাসপোর্ট কে বলা হয়ে থাকেক ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং তাদের স্বামী স্ত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন। তার সাথে উচ্চতার আদালতের বিচারপতিগণরা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর উপাচার্যগনরা, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিদেশে বাংলাদেশী মিশনের কর্মকর্তারা লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবে।
শিশুদের ই পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে
- নিয়মিত বাস সাধারণ ই পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে ডেলিভারি স্লিপ হাতে পাওয়ার পর থেকে পনেরো অথবা ২১ কর্ম দিবসে অপেক্ষা করতে হবে।
- তাছাড়া আপনি যদি এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে পাসপোর্ট নিন। সে ক্ষেত্রে আপনার সময় লাগবে ৭ থেকে ১০-কর্ম দিবস।
- আর আপনার যদি খুবই প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে আপনি সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে পাসপোর্ট নিতে পারেন। এতে আপনার সময় লাগবে ২ কর্ম দিবস।
বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট আবেদন ফি কত টাকা
আমরা হয়তো অনেকেই জানি না বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট আবেদন ফি কত টাকা। এই পার্ট শেষে আমরা জানতে পারবো সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়? সে সম্পর্কে। পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে বাচ্চা এবং পূর্ণবয়স্কদের জন্য ফি একই রকমের। ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে তা নির্ভর করে মূলত ৩টি বিষয়ের উপর।
- পাসপোর্ট এর মেয়াদ কেমন হবে তার উপর
- পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা কত হবে
- ডেলিভারির ধরন
ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে পারে সে সম্পর্কে একটি তালিকার মাধ্যমে নিচে ধারণা দেওয়া হলো-
সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়
অনেকেরই প্রশ্ন থাকে সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়? এক বছরের শিশু যদি মায়ের সাথে বিভিন্ন দেশের ঘুরতে যায় সে ক্ষেত্রেও কি পাসপোর্ট করতে হবে। তাদের উদ্দেশ্যে শুধু বলতেছি, কেবল ১ বছর না। একদিন বয়স হলেও সেই শিশুদের ক্ষেত্রেও পাসপোর্ট করতে হবে। তবে অনেক আগে এই নিয়মটা ছিল না। বাচ্চারা তার মায়ের সাথেও যে কোন দেশে ভ্রমনে যেতে পারতো।
আর এখন প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই অন্য দেশে যেতে চাইলে আলাদা আলাদা করে পাসপোর্ট লাগবে। যেকোনো বয়সের মানুষই ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট বানাতে পারবে। বয়স যদি ২০ বছরের কম হয় সেক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্ট করতে পারবেন। আর বয়স যদি ২০ বছরের উপরে হয় সেক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করতে পারবেন। যাদের ১ দিন থেকে ১৫ বছর বয়স। তাদেরকে শিশু হিসেবে ধরা হয় এবং এই ১ দিন থেকে ১৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের জন্য তার মা-বাবারও কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়। সুতরাং বলা যায় সর্বনিম্ন ১ দিন বয়স থেকেই যে কোন বয়সে মানুষ পাসপোর্ট করতে পারবে।
ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম
বাচ্চাদের এবং পূর্ণবয়স্কদের ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম একই রকমের। ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো-
- প্রথমেই বাংলাদেশ ই পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে যেতে হবে। অনলাইন পোর্টালে যেতে এই লিংকে ক্লিক করুন। 👉 অনলাইন পোর্টাল লিংকে ক্লিক করুন
- ই পাসপোর্ট এর এপ্লাই করার জন্য ”এপ্লাই অনলাইন” Apply Online এ ক্লিক করতে হবে।
- নির্দেশনা অনুযায়ী ফরমটি পূরণ করুন
- তারপর পাসপোর্ট এপ্লাই ফি পরিশোধ করুন
- ছবি তুলতে ও আঙ্গুলের ছাপ দিতে এপয়েন্টমেন্ট নিন।
- নির্ধারিত তারিখ টি বায়োমেট্রিক এর তথ্য প্রদান করুন এবং
- পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়ার স্লিপটি সংগ্রহ করে যত্নে রেখে দিন
শিশুদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
- একদিন থেকে ১৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের পাসপোর্ট করতে কিছু ডকুমেন্ট বা কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এতক্ষণে আমরা জানতে পেরেছি সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়? সে সম্পর্কে। এখন আলোচনা করব, শিশুদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- শিশুর জন্ম সনদ এর ইংরেজি কপি
- শিশুর মা বাবার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি
- নিকটতম কোনো আত্মীয়ের ফোন নাম্বার
- বাসার বয়স যদি ছয় বছরের কম হয় সেক্ষেত্রে 3R Size ল্যাব ব্যাকগ্রাউন্ড এর ছবি লাগবে
- NOC - এনওসি বা অনাপত্তি পত্র। এটা প্রয়োজন হবে (স্বায়ত্তশাসিত/ আধা সরকারি ও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য)।
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের ”এ চালান”
শিশুর পাসপোর্ট আবেদন করতে গেলে অবশ্যই এই সব ডকুমেন্টগুলো সাথে নিয়ে যেতে হবে। নয়তো পাসপোর্ট করা যাবে না।
- শিশুর জন্ম সনদ ইংরেজি কপিঃ ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে শিশুর জন্ম সনদ ১৭ ডিজিটাল হতে হবে। এছাড়াও শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদটি অনলাইন কপি হতে হবে।
- শিশুর মা-বাবার এনআইডি কার্ডের ফটোকপিঃ বাচ্চার ই পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই পিতা মাতার এনআইডি কার্ড প্রয়োজন। কারণ বাচ্চারা অপ্রাপ্তবয়স্ক। বাচ্চাদের বয়স যদি ১ দিন থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হয়। সেক্ষেত্রে বাচ্চার জন্ম সনদ দিয়ে ই পাসপোর্ট করতে পারবে। তবে মা বাবার এনআইডি কার্ডের নাম্বার যুক্ত করতে হবে।
- নিকটতম কোন আত্মীয়ের ফোন নাম্বারঃ ই পাসপোর্ট আবেদন করার ক্ষেত্রে কোনো আত্মীয়ের ফোন নাম্বার দিতে হবে এবং সাথে তার ঠিকানাও দিতে হবে। কারণ কোন জরুরি প্রয়োজনে যদি আপনাকে না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে উক্ত আত্মীয় কে ফোন দিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় কথা তাকে বলা যাবে।
- বাচ্চার বয়স যদি ছয় বছরের কম হয় সেক্ষেত্রে 3R Size ল্যাব ব্যাকগ্রাউন্ড এর ছবি লাগবেঃ বাচ্চার ই পাসপোর্ট এর আবেদন করার সময় 3R Size ল্যাব ব্যাকগ্রাউন্ড এর ছবি যুক্ত করতে হবে। এটা শুধু ৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যুক্ত করতে হয়। যদি ৬ বছরের বড় হয় সেক্ষেত্রে যুক্ত করতে হবে না।
- NOC - এনওসি বা অনাপত্তি পত্রঃ আপনি যদি সরকারি সরকারি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে NOC - এনওসি বা অনাপত্তি পত্র আপনার অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে এবং পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে এটি যুক্ত করতে হবে।
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের ”এ চালান”: বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে আবেদন ফি জমা দিতে হয়। আর এই দেয়ার ক্ষেত্রে আপনি এ চালান ট্যাব দিয়েও কি পরিশোধ করতে পারবেন। তাছাড়াও আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে আপনার কার্ড দিয়ে পাসপোর্টটি পরিশোধ করতে পারবেন। পাসপোর্ট পরিষদের চালার আবেদন পত্রের সঙ্গে যুক্ত করে আপনারা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এগুলো জমা দিতে হবে। যদি আপনি এ চালানের মাধ্যমে বিল পরিশোধ না করে ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিল পরিশোধ করেন। সেক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
লেখক এর শেষ মন্তব্য
GAZI MAX IT এর পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়? সে সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটির মধ্যে থেকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- অনলাইনে ই পাসপোর্ট এর আবেদন করার কারণে শিশুদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম খুবই সহজ হয়ে গেছে। তাছাড়াও বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে কোন সত্যায়ন পত্রের প্রয়োজন হয় না। কারণ তাদের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর খুজে পেয়েছেন।
সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়? এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়? এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তবে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবী ও পরিচিতদের মাঝে নিচের 👇 যেকোনো শেয়ার অপশন থেকে শেয়ার করে দিতে পারেন। আজকের আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত বা তথ্য থাকলে কমেন্ট বক্সে 👇 জানিয়ে দিবেন (ধন্যবাদ)।
Comments
Post a Comment