পোস্ট সূচিপত্রঃ
.
গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে কি আপনি জানেন না? গোলাপ চাষের জন্য জমি নির্বাচন ও তৈরি করবেন কিভাবে? তা নিয়ে কি আপনি চিন্তিত? তবে এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে জানতে পারবেন গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটির লেখা অনুযায়ী কাজ করলে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পাবেন বলে আমি আশা করি।
আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি জানতে পারবেন গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে? গোলাপ চাষের জন্য জমি নির্বাচন ও তৈরি করবেন কিভাবে?বিভিন্ন জাতের গোলাপ ফুল সম্পর্কে।গোলাপের চারা বা কলম রোপন কিভাবে করবেন? গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
গোলাপ ফুলের বৈশিষ্ট্য
গোলাপ ফুলকে বলা হয় ফুলের রানী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেউ আছে গোলাপের পাপড়ির যোগ্য আবার কেউ গোলাপের কাটা। তবে গোলাপের সবচেয়ে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো- গোলাপ সবাই পছন্দ করে। প্রশ্ন থাকে গোলাপে কাটা থাকা সত্ত্বেও কেন মানুষ গোলাপকে ভালোবাসে। আসলে পরিশ্রম ছাড়া কেউই সফলতা অর্জন করতে পারে না। গোলাপ ফুল মূলত আকারে ১.২৫ সেমি থেকে ১৭.৫ হয়ে থাকে। ১.২৫ মানে হচ্ছে ০.৫ ইঞ্চি এবং ১৭.৫ সেমি মানে হচ্ছে ৭ ইঞ্চি। গোলাপ ফুল হলুদ, সাদা, গোলাপি, ও লাল রংয়ের হয়ে থাকে। এগুলোই হলো গোলাপ ফুলের বৈশিষ্ট্য।
বিভিন্ন জাতের গোলাপ ফুল
গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে তার আগে আপনাকে বিভিন্ন জাতের গোলাপ ফুল সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের প্রকৃতির মাঝে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফুল দেখতে পাই। ফুলের গন্ধ, রূপ ও সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ হই। আর এই ফুলগুলোর মধ্যে একটি হল গোলাপ ফুল। গোলাপ একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ রয়েছে। গোলাপের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ১৫০ এর বেশি হয়েছে।
আদিম যুগ থেকেই গোলাপের ব্যবহার অনেক। এছাড়াও অনেক ধর্মীয় উৎসবের কাজেও গোলাপের পানি ব্যবহার হয়। গোলাপ ব্যবহার করা হয় জেলি, মিষ্টি, হালুয়া তৈরীর সুগন্ধি ক্ষেত্রে। অনেকে আবার গোলাপের বাগানো তৈরি করে থাকে। এছাড়া ফুলের তোড়া বানানোর কাজেও গোলাপের ব্যবহার করা হয়। চলুন এবার জেনে নেই গোলাপের বিভিন্ন ধরনের জাতের নাম সম্পর্কে-
👉 আরও পড়ুনঃ গোলাপ গাছের যত্ন কিভাবে নিবেন
- অল্টিসিমো (Altissimo): এই ফুলের উৎপত্তি হয় ফ্রান্সে এবং ১৯৬৬ সালে উৎপত্তি হয়। এই ফুল গাছের উচ্চতা ৭ থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। আলো শোষণ ক্ষমতা পূর্ণ সূর্য। অল্টিসিমো ফুলের রং লাল হয়।
- ব্লেজ ফুল (Blaze flower): ব্লেজ ফুলের উৎপত্তি হয় ১৯৩২ সালে। এই ফুল গাছের উচ্চতা হয় প্রায় ১৫ ফুট এবং এই ফোন লাল রঙের হয়ে থাকে। ব্লেজ ফুল পূর্ণ সূর্য থেকে আংশিক ছায়ায় রাখতে হবে।
- সানসিল্ক (Sunsilk): ফুলের উৎপত্তি হয় লন্ডনে এবং এর উৎপত্তি কাল ১৯৫৪ সাল। সানসিল্ক ফুলে গাছের উচ্চতা ৩ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। সানসিল্ক ফুলের রং হালকা হলুদ হয়। এই ফুল গাছ পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হয়।
- ডাচ গোল্ড (Dutch gold): ডাচগোল্ড ফুলের উৎপত্তি হয় লন্ডনে এবং ১৯৬৩ সালে উৎপত্তি হয়। এই ফুল গাছ তিন ফুট লম্বা হয়। ডাচ গোল্ড ফুল গাছ পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হয় এবং এই ফুল সোনালী হলুদ রঙের হয়ে থাকে।
- জুলিয়াস রোজ (Jullia’s rose): এই ফুল গাছের উৎপত্তি হয় আমেরিকাতে এবং ২০০৪ সালে উৎপত্তি হয়। এই ফুল গাছের উচ্চতা ৩ ফুট এবং জুলিয়াস রোজ পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হয়। এই ফুলের রং মিশ্র তামাতে হয়ে থাকে।
- কুইন এলিজাবেথ (Queen Elizabeth): এই ফুলের উৎপত্তি হয় আমেরিকাতে এবং ১৯৫৪ সালে। কুইন এলিজাবেথ ফুল গাছের উচ্চতা চার থেকে ছয় ফুট লম্বা হয়। পূর্ণ সূর্যের আলোর শোষণ ক্ষমতা আছে। কুইন এলিজাবেথ ফুল গোলাপি রঙের হয়ে থাকের্।
- পাপা মিলাঁ (Papa meilland): পাপা মিলা ফুলের উৎপত্তি হওয়া ১৯৬৩ সালে এবং ফ্রান্সে উৎপত্তি হয়। পাপা মিলা ফুল গাছের উচ্চতা ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়। এই ফুল গাছের পূর্ণ সূর্য আলোর শোষণ ক্ষমতা রয়েছে। পাপা মিলা ফুল লাল রংয়ের হয়।
- আইসবার্গ (Iceberg): আইসবার্গ ফুলের উৎপত্তি জার্মানিতে এবং এই ফুল ১৯৫৮ সালে উৎপাদিত হয়। এই ফুল গাছ ৩ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এই ফুল গাছকে পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হয়। আইসবার্গ ফুল সাদা রঙের হয়ে থাকে।
- রোজ গুজার্ড (Rose Gaujard): রোজ গুজার্ড ফুলের উৎপত্তি হয় ফ্রান্সে এবং ১৯৫৭ সালে উৎপত্তি হয়। এই ফুলগাছের উচ্চতা চার ফুট লম্বা হয়। এই ফুল গাছকে পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হয়।, রোজ গুজার্ড ফুলের রং হালকা গোলাপি বিপরীতে সাদা হয়।
- বেংগলি রোজ (Bengali rose): বেংগলি রোজ ফ্লোরেন্সে ১৯৮২ সালে উৎপত্তি হয়। এই ফুল গাছের উচ্চতা তিন থেকে চার ফুট লম্বা হয় এবং এই ফুল গাছ পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হয়। বেংগলি রোজ তামাটে হলুদ অথবা কমলা রঙের হয়ে থাকে।
গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
গোলাপ হলো শীতকাল মৌসুমের ফুল। তবে বর্তমান সময়ে গোলাপ চাষ সারা বছর ধরেই করা হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনা করে এই গোলাপকে বলা হয় ফুলের রানী। ফুল প্রেমিকদের প্রিয় ফুল হলো গোলাপ।
গোলাপ ফুল বিভিন্ন জলবায়ুতে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। তাই এই গোলাপ ফুল পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই চাষ করা হয়। কাঠগোলাপ হিসেবে বেশিরভাগই গোলাপ ফুল ব্যবহৃত হয়। গোলাপ ফুল ব্যবহার করা হয় সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বাগান, লন, কেয়ারী তাছাড়াও বারান্দা সাজাতে গোলাপ ফুল ব্যবহার করা হয়। সাজানোর বাহিরে ও আর তোর এবং সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয় গোলাপ ফুল।চলুন গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-
গোলাপের বংশবিস্তার: গোলাপের বংশবিস্তার করতে শাখা-কলম, দাবা কলম, গুটি কলম ও চোখ কলম পদ্ধতির মাধ্যমে বংশবিস্তার করা হয়। নতুন জাত তৈরি করার জন্য বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়।
গোলাপের চারা বা কলম রোপন কিভাবে করবেন
গোলাপের চারাবাগ কলম রোপনের আশ্বিন মাস। তবে যদি আপনি পৌষ মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করতে চান। সে ক্ষেত্রে বেডের গর্তের মাঝখানে ক্ষুদ্রাকৃতির গর্ত করে চারা রোপন করতে হবে। প্রথমে পলিথিন ব্যাগ বা মাটির টপ থেকে চারা বের করে দুর্বল শাখা বা দুর্বল চারাগুলো এবং আক্রমণাত্মক চারাগুলো ও আক্রমনাত্মক শিকারগুলো কেটে ফেলুন। চারা লাগানোর পরে, তারার গোড়ায় শক্তভাবে মাটি চেপে দিন। চারা রোপন করার পরে একটি খুঁটি পুঁতে দিয়ে, খুটির সাথে চারাটি ভালোভাবে বেঁধে দিন। চারা লাগানোর পরে গোড়ায় পানি দেয়া উচিত এবং ২ - ৩ দিনের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।
গোলাপ চাষের জন্য জমি নির্বাচন ও তৈরি করবেন কিভাবে
- গোলাপ উৎপাদনে জমি নির্বাচন: গোলাপ উৎপাদনের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটি দরকার। ছায়াবিহীন উঁচু জায়গায় এবং জলাবদ্ধতা হয় না। এমন জায়গায় গোলাপ ভালো জন্মে।
- জমি তৈরি: গোলাপ চাষ করার নিয়ম হলো নির্বাচনকৃত জমি ৪ - ৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। তারপর মাটি ভালোভাবে কুপিয়ে ৫ সেন্টিমিটার উঁচু করে তিন মিটার. X ১ মিটার আকারের বেড তৈরি করতে হবে। কেয়ারি তৈরি করা হয়ে গেলে নির্দিষ্ট দূরত্বে ৬০ সেন্টিমিটার. X ৬০ সেন্টিমিটার আকারে ও ৪৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত খুঁজতে হবে। গর্তের উপরের মাটি ও নিচের মাটি আলাদা আলাদা করে রাখতে হবে। চারা রোপনের ১৫ দিন আগে গর্ত গুলো খুড়ে রাখতে হবে। ১৫ দিন আগে গর্ত করে রাখলে জীবাণু এবং পোকামাকড় মারা যায়।
- সার প্রয়োগ করা: প্রত্যেকটা গর্তের উপরের মাটি গুলোর সাথে সার ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রিত সার ও মাটি গুলো গর্তের মধ্যে ফেলতে হবে। এবার নিচের মাটিগুলোর সাথে গোবর দিতে হবে ৫ কেজি, পাকা পচা সার দিতে হবে ৫ কেজি, ও ৫০০ গ্রাম ছাই এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তের উপরের স্তরে দিতে হবে। ভরাট করা হয়ে গেলে এভাবে ২০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিন। যাতে সারগুলো ভালোভাবে পচে। সার ভালোভাবে পচলে গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় হবে। সতর্কতা থাকতে হবে, বর্ষাকালে যেন বৃষ্টির পানি গাছের গোড়ায় আটকে না থাকে। সেজন্য অবশ্যই নালা তৈরি করতে হবে।
লেখক এর শেষ মন্তব্য
GAZI MAX IT এর পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটির মধ্যে থেকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- গোলাপ চাষের জন্য আপনাকে সঠিকভাবে জমি নির্বাচন করতে হবে এবং সঠিকভাবে চারা রোপন করতে হবে। তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর খুজে পেয়েছেন।
গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। গোলাপ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন? এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তবে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবী ও পরিচিতদের মাঝে নিচের 👇 যেকোনো শেয়ার অপশন থেকে শেয়ার করে দিতে পারেন। আজকের আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত বা তথ্য থাকলে কমেন্ট বক্সে 👇 জানিয়ে দিবেন (ধন্যবাদ)।
Comments
Post a Comment