বিভিন্ন ধরনের মুখের আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু শেপ করবেন তা কি আপনি জানেন না? সৌন্দর্য কে না চায়! চেহারার সৌন্দর্য মানেই মানুষের মনের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয়। আর চেহারার সৌন্দর্য বাড়াতে, চাই ভ্রুর সৌন্দর্য ঠিক রাখতে। তাই আপনিও জানুন প্রাকৃতিক উপায়ে আইব্রোর যত্ন নিবেন কিভাবে? ভ্রুর সৌন্দর্য বাড়াতে আপনি আমাদের এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন। তাহলে আপনি আপনার অজানা প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের এই আর্টিকেলটির সাথে থাকেন, তাহলে আপনি আইব্রোতে সমস্যা হওয়ার কিছু কারণ এবং আইব্রো সম্পর্কে কিছু টিপস অবশ্যই মেনে চলবেন? এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মুখের আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু শেপ করবেন? সে সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন। তাই মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটির শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আইব্রোতে সমস্যা হওয়ার কিছু কারণ
অনেক সময় কারো কারো ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট সমস্যা ছাড়াই ভ্রু ঝরে যেতে শুরু করে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে শরীরের অসুস্থতা এবং জেনেটিক কারণেও ভ্রু পাতলা হয়ে যেতে থাকে। প্লাস্টিক সার্জন ডাক্তার মনিশ সান্দালিয়ার মতে- একজিমা এবং পোরিয়োসিসের মতো নানা রকমের রোগের কারণেই শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে যায়। অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়াও যদি কারো শরীরে কঠিন কোন রোগের বাসা বাঁধে, তাহলেও লোম ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভ্রু প্লাক করলে, ঘন ঘন রূপচর্চা করলে, ফেসিয়াল করলে এবং মেকআপ ব্যবহার করলে এগুলোতে কেমিক্যাল থাকার কারণে ভ্রু ঝরে যায়।
আইব্রো সম্পর্কে কিছু টিপস অবশ্যই মেনে চলবেন
বিভিন্ন ধরনের মুখের আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু শেপ করবেন? আরেকটু পরেই এ সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন। যদিও আমরা জানি আইব্রোর সৌন্দর্য মানেই হলো চেহারা সুন্দর্য। তবে এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার কিছু টিপস অবশ্যই মেনে চলা দরকার। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই-
- কম বয়সে ভ্রু প্লাকিং করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
- আইব্রো ব্যবহার করার পাশাপাশি আইল্যাশ ঘন দেখানোর জন্য মাস্কারা ব্যবহার করতে পারেন।
- আইব্রো তোলার পরে সরাসরি ত্বকে বরফ লাগাবেন না, তুলো দিয়ে বরফ লাগাতে পারেন।
- যদি আপনার আইব্রো ব্রাশ না থাকে, তাহলে আপনি পুরন টুথপেস্ট পরিষ্কার ব্রাশ কাজে লাগাতে পারেন।
- নিজে নিজেই ট্যুইজার দিয়ে আইব্রো তোলার চেষ্টা করবেন না। এতে আপনার আইব্রোর গোড়ায় কিংবা চোখেরও কোন ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
- অনেকেরই ধারণা আছে আইব্রো প্লাক করার পরে ভ্রু অনেক মোটা হয়ে যায়। কিন্তু এই ধারণাটি একদমই ভুল। ভ্রু প্লাক করার পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলে, ভ্রু আগের চেয়ে অনেক মোটা দেখা যায়।
- সম্পূর্ণ মুখে থ্রেডিং করা থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ সম্পূর্ণ মুখ থ্রেডিং করলে র্যাশ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- স্কিনে ব্লিচ করা থেকে বিরত থাকুন এবং নিয়মিত স্কিন কেয়ার করুন।
বিভিন্ন ধরনের মুখের আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু শেপ করবেন
আপনি যদি আপনার সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে পারেন তাহলে আর পার্লারের প্রয়োজন কিসে। নিজেকে খুব সুন্দর করে সাজালেও যদি ভ্রুর জোড়া ঠিকমতো না থাকে তাহলে ওভারঅল লোকটাই কেমন যেন লাগে। মানুষের চেহারায় সৌন্দর্য অনেকটা নির্ভর করে ভ্রুর উপর। নিজেকে পরিপাটি রাখার জন্য অবহেলা না করে কিছু ছোটখাটো নিয়ম মেনে চললেই নিজের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। জেনে নেয়া যাক বিভিন্ন ধরনের মুখে আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু আর্ট করবেন সে সম্পর্কে -
- গোল মুখের জন্য ভ্রু আর্ট: চওড়া চিকবোন আর ছোট চিবুক থাকাই হলো গোল মুখে আকৃতি। আপনার মুখের আকৃতি যদি গোল হয়, তাহলে বাঁকা ধনুক টাইপের ভ্রু আর্ট করা থেকে বিরত থাকুন। এতে মুখ আরো গোল দেখা যায়। গোল মুখে ভ্রুর আর্ট করার সময় একটু উঁচু করে করুন। গোল মুখে ভ্রুর লেংথ যতটুকু সম্ভব বেশি রাখার চেষ্টা করবেন। লেংথ বেশি রাখলে আপনার ফেসটা একটু লম্বা লাগবে।
- লম্বাটে ফেস এর জন্য ভ্রু আর্ট: লম্বাটে ফেস চেনার উপায় হলো কপাল, গাল এবং “জ” লাইনে মোটামুটি ভাবে প্রশস্ত থাকে। এই আকৃতির মুখ যাদের আছে তারা কখনো ভ্রুর লেংথ ছোট করে ফেলবেন না। যত সম্ভব দৈর্ঘ্য রেখে দিন। এই মুখের মানুষের জোড়া ভ্রু রাখা মানানসই না। তাই দুই ভ্রু মাঝখানের অংশ পরিষ্কার করে ফেলুন।
- পান পাতা মুখের ভ্রু আর্ট: বাঙালি মেয়েদের পান পাতা মুখ খুব কমই দেখা যায় এবং এর কদর অনেক। পান পাতা মুখ চেনার উপায় হল প্রশস্থ কপাল এবং সরু চিবুক। আর এই চওড়া কপাল ছোট দেখানোর জন্য ভ্রুর সেভ ঠিকঠাক মতো করতে হবে। এই মুখের জন্য একটু রাউন্ড আকারে ভ্রুর ট্রেডিং করতে হবে।
- চৌকা মুখ: এই মুখ চেনার উপায় হল “জ” লাাইন খুব ডিফাইডন হয়ে থাকে। এই ভ্রু থ্রেডিং করার সময় ভ্রুর আর্চ একটু উঁচু করে রাখতে পারেন। লেংথ ছোট না করে যত সম্ভব রেখে দিন। এতে আপনার মুখ একটু লম্বা দেখাবে।
- ডিম্বাকৃতির মুখের ভ্রু শেপ: ডিম্বাকৃতির মুখ থাকা মানেই ভাগ্যবতী। কারণ এদের মুখে সব ধরনের ভ্রু শেপই মানায়। গোল এবং ডিমাকৃতির মুখের মধ্যে তেমন বেশি পার্থক্য নেই। গোল মুখে চিকবোনের দিকটা একটু চওড়া হয় এবং ডিম্বাকৃতির মুখে কপালের দিকটা একটু চওড়া থাকে। ডিম্বাকৃতির মুখে ভ্রুর শেপ নরমাল হালকা হলে বেশি সুন্দর লাগে। বিভিন্ন ধরনের মুখের আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু শেপ করবেন? তার সর্বশেষ টপিই ছিলো এটি।
ভ্রুর সৌন্দর্য বাড়াতে কিছু কৌশল ফলো করুন
সুন্দর আইভ্রুর জন্য শুধু রাত্রে থ্রেডিং করলেই হবে না। আপনাকে সঠিক প্রোডাক্ট সিলেক্ট করে সুন্দরভাবে আইব্রো আঁকতে হবে। ভ্রুর সৌন্দর্য বাড়লে, ভ্রু,চোখ ও চেহারার সৌন্দর্যও বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক ভ্রুর সৌন্দর্য বাড়াতে কিছু কৌশল সম্পর্কে -
- কালো রং দিয়ে ভ্রু আর্ট করলে ভ্রুর ন্যাচারাল লুক নষ্ট হয়ে যায়। আইভ্রুর ন্যাচারাল লুক পেতে আইব্রো পাউডার অথবা আইব্রো পেন্সিল ব্যবহার করুন এবং চুলের রং এর চেয়ে এক শেইড বা দুই শেইড হালকা নিন।
- গর্জিয়াস মেকআপ এর ক্ষেত্রে চুলের রঙের সঙ্গে মিশিয়ে আইব্রো পেন্সিল নেই। পেন্সিল দিয়ে ছোট ছোট টান দিয়ে ভ্রু আর্ট করুন। যাতে আসল লোমের মতোই ন্যাচারাল লাগে।
- যদি আপনি আইব্রো পমেট বা আই-ব্রু জেল নিতে চান, তাহলে আইব্রু ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। ভ্রুর প্রথম দিকটা গাঢ় রাখুন এবং শেষের দিকটা হালকা শেড করুন।
- ভ্রু আঁকতে গেলে যদি তা একটু এলোমেলো হয়ে যায় বা একটু ছড়িয়ে যায়, তাহলে কনসিলার দিয়ে ঠিক করে নিন। ভ্রুর উপরদিকে এবং নিচের দিকে ত্বকের চেয়ে এক শেইড হালকা কনসিলার ব্যবহার করতে হবে।
- মেকাপের সুন্দর লুক পেতে হলে ভালোভাবে ব্লেন্ড করাই হলো আসল রহস্য। তাই ব্রাশ দিয়ে ভ্রু ঠিক করে নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সুন্দরভাবে ব্লেন্ড করবেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে আইব্রোর যত্ন নিবেন কিভাবে
বিভিন্ন ধরনের মুখের আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু শেপ করবেন? সে সম্পর্কে এতখন আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়ে আইব্রোর যত্ন নিবেন কিভাবে? সে সম্পর্কেও জানা উচিত। পারফেক্ট আইব্রোর জন্য শুধু সাজলেই হবে না। ঠিকমতো যত্ন নিতে হবে। মুখ স্ক্রাবিং করার সাথে সাথে ভ্রুরও স্ক্রাবিং করুন। কেননা ভ্রুতেও অনেক ডেডসেল জমে। তাই সপ্তাহে একবার হলেও অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল এবং পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে মাসাজ করে নিবেন। বেশি ভ্রু প্লাক করা ঠিক নয়। কারণ এতে ভ্রুর লোমকূপের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
আর সব সময় বাহির থেকে ফিরে এসে মেকআপ ক্লিন করার সাথে আইব্রোও ক্লিন করে নিবেন। মানুষের সৌন্দর্য অনেকটা নির্ভর করে তার ভ্রুর উপরে। তাই আপনি যদি ভুল আইব্রোর পেন্সিল দিয়ে ভ্রু শেইড পিক করেন, ওভার প্লাক, কালো করে ভ্রু আর্ট করা এগুলো আপনার ভ্রুকে আর্টিফিশিয়াল করে তুলবে এবং এতে চেহারার অবস্থা খুব বাজে লাগবে। তাই এই ভুলগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। তাহলেই দেখবেন আপনাকে অনেক বেশি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় লাগবে। চলুন আরো কিছু তথ্য জেনে নেই, প্রাকৃতিক উপায়ে আইব্রোর যত্ন নিবেন কিভাবে? সে সম্পর্কে -
- চোখের নিচের রান্ডারলাইনে আই ক্রিম, ভিটামিন ই ক্রিম, নরমাল ক্রিম কিংবা বেবি ক্রিম ব্যবহার করুন।
- আইব্রোর লোম ঝরে গেলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করুন।
- আইব্রোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে নিয়মিত আইব্রো ব্রাশ করতে পারেন।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেকআপ দেওয়ার সময় অবশ্যই আইব্রোও ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন এবং নাইট ক্রিম ব্যবহার করবেন।
- লোম তোলার ক্ষেত্রে টুইজার বা শন দিয়ে অনেকগুলো লোম একসাথে না তুলে একটা একটা করে তুলে ফেলুন।
লেখক এর শেষ মন্তব্য
আমাদের মনকে ভালো রাখতে অবশ্যই চেহারার সুন্দরদের প্রয়োজন। আর চেহারার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার জন্য ভ্রুর সৌন্দর্য বাড়াতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি জানতে পেরেছেন বিভিন্ন ধরনের মুখের আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু শেপ করবেন সে সম্পর্কে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে নতুন কিছু জানতে পেরে আপনার ভালো লেগেছে।
এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে হয়তো আপনি আপনার অজানা তথ্যগুলো খুঁজে পেয়েছেন। এ আর্টিকেলটিতে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার নজরে দেখবেন। বিভিন্ন ধরনের মুখের আকৃতি অনুযায়ী কিভাবে ভ্রু শেপ করবেন এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত বা তথ্য থাকলে কমেন্ট বক্সে 👇 জানিয়ে দিবেন।
Comments
Post a Comment