আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা ধরনের রোগে ভূগে থাকি। তেমনি একটি কষ্টদায়ক রোগ হলো পাইলস। যখন আমাদের কারোর পাইলস হয়ে থাকে, তখন আমাদের নানা ধরনের প্রশ্ন মাথায় আসে। আর হ্যাঁ আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার? হেমোরয়েড বা পাইলসের ঝুঁকিতে কারা বেশি থাকে? বিস্তারিত জানতে পারবেন। পাইলস সম্পর্কিত আপনার অজানা সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের এই আর্টিকেলটির সাথে থাকেন, তাহলে পাইলসের সমস্যায় কোন ঔষধ খাওয়া যাবে না? হেমোরয়েড বা পাইলসের ঝুঁকিতে কারা বেশি থাকে? পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার? সে সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন। তাই এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
.
ভূমিকা
পাইলস বাংলাদেশের প্রায় খুবই পরিচিত একটি রোগ। মলাশয় জনিত রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাইলস রোগটি দেখা যায়। পাইলস হলে মলদার এর ভিতরের শিরা ফুলে যায়। যার কারণে মলত্যাগের সময় ব্যথা ও রক্তপাত হয়। যদি কারো কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে পাইলস রোগের সমস্যা আরো বেড়ে যায়। তাই পাইলস এর ভালো করতে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে কখনো যেন মল শক্ত না হয়। অনেকেরই অস্ত্রপাত ছাড়াই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই রোগ ভালো হয়েছে।
পাইলস প্রতিরোধ করতে কোন খাবার খেতে হবে
পাইলস প্রতিরোধ করতে প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। খাদ্য আঁশ মূলত দুই রকমের হয়ে থাকে। একটি হলো পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং পাকস্থলীর হজম শক্তিকে স্লথ করে। এর ফলে মল নরম হয়। আর অন্য খাবারটি হলো অদ্রবনীয়। যা হজম ক্রিয়া শেষে গোটা অবস্থায় মলের সাথে বের হয় এবং মল নরম করতে সাহায্য করে। যারা পাইলস জনিত রোগটিতে ভুগছেন, তাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই আঁশযুক্ত খাদ্য যোগ করুন। যাদের পাইলস জনিত সমস্যা রয়েছে। তাদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার? জেনে নেয়া যাক পাইলস প্রতিরোধ করতে কোন খাবার খেতে হবে সে সম্পর্কে-
- পাইলস সমস্যা দূর করতে সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে
- মৌসুমি ফলমূল খেতে হবে
- পাইলসের সমস্যায় মুক্তি পেতে লাল আটার রুটি খেতে হবে
- ঢেঁকি ছাড়া চাল খেতে হবে
- সাবুদানা এবং বার্লি খেতে পারেন
- এই সবগুলো খাবারের পাশাপাশি আপনাকে দৈনিক প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে আপনি আপনার পাইলস সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন এবং পাইলসের সমস্যা নব্বই শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে এই খাবার গুলোতে।
পাইলস সমস্যা দূর করতে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
পাইলস সমস্যার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি আপনি আপনার খাদ্যভ্যাস গুলি পরিবর্তন করে ফেলুন। যাতে আপনি খুব তাড়াতাড়ি পাইলস এর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন জেনে নেই পাইলস সমস্যা দূর করতে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কে -
- চা কফি এবং ক্যাফেইন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। গ্রিন টি খেতে পারবেন তবে অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
- অতিরিক্ত তেল কিংবা মসলা জাতীয় খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
- গরুর মাংস কম পরিমাণে খেতে হবে এবং রেড মিট ও কম পরিমাণে খেতে হবে।
- প্রক্রিয়া জাত দানাশস্য এড়িয়ে চলতে হবে।
- ধূমপান বা মদ্যত্যাগ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
- বাইরের প্রিজারভেটিব সমৃদ্ধ খাবার থেকে বিরত থাকুন
- অতিরিক্ত অধ্রবণীয় আঁশ জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন - লাউশাক, কুমড়া শাক
- মল শক্ত করে এমন সবজি থেকেও বিরত থাকতে হবে। যেমন - কাঁচা কলা খাওয়া থেকে এগিয়ে চলতে হবে।
- দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- দুধ, চিজ এবং পনির খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার
পাইলস: হেমোরয়েডকেই মূলত পাইলস বলা হয়। এই পাইলস হলে এমন একটি অবস্থা হয়, যেখানে মলদ্বারের শিরা গুলো ফুলে যায়। পাইলস হলো খুবই সাধারণ। পাইলস সাধারণত বয়স্ক লোকদের মধ্যে গড়ে চার জনের মধ্যে তিন জনারই হয়ে থাকে।
পাইলস এর প্রকার: পাইলস মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। ইন্টার্নাল পাইলস যা ভিতরে হয়ে থাকে এবং এক্সটার্নাল পাইলস যা বাইরের দিকে হয়ে থাকে। মলদ্বারের চারপাশের শিরা গুলোতে কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি হওয়ার ফলে ফুলে উঠে। তারপর এই ফোলা ভাব থেকেই সৃষ্টি হয় পাইলসের।জেনে নেয়া যাক হেমোরয়েড বা পাইলস হওয়ার কারণ কি সে সম্পর্কে -
- বার্ধক্য জনিত হওয়ার কারণে ত্বক পাতলা হয়ে যায় এবং পাইলস হয়
- পায়ুপথে সহবাস করলে
- টয়লেটের সিটে দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে বসে থাকলে
- কম ফাইবারযুক্ত ডায়েট করলে
- স্থূলতার কারণে
- গর্ভাবস্থা থাকার কারণে
- ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে
- শক্ত বা কষা পায়খানা হওয়ার কারণে
- অনেক সময় ধরে পায়খানার বেগ আটকে রাখলে
- অতিরিক্ত ওজন বাড়ার কারণে
- শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে
বয়স অনুযায়ী কতটুকু আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে তার তালিকা
পাইলসের সমস্যা দূর করতে আঁশযুক্ত খাবারের কোন বিকল্প নেই। বয়স অনুযায়ী কতটুকু আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে তার তালিকা দেখে নিন -
পাইলসের সমস্যায় কোন ঔষধ খাওয়া যাবে না
কোনো রোগ হওয়ার আগে আমাদের উচিত সেই সম্পর্কে ধারণা নেয়া। তাই পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার? সেই সম্পর্কে আপনিও জেনে নিন। কিছু ব্যাথা নাশক ঔষধ রয়েছে যা খেলে পাইলসের সমস্যা আরো বেশি হতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো -
ড্রামাডল: এই ওষুধটির রয়েছে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। এই ওষুধটি খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোন রোগের কারণে আপনার যদি প্যারাসিটামল ও ট্রামাডল একসাথে খেতে হয়, সে ক্ষেত্রেও এই ঔষধ এড়িয়ে চলতে হবে।
আইবুপ্রফেন ঔষধ: পাইলস জনিত সমস্যা রোগীদের এই ওষুধটি খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। এটি খেলে রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই আপনার বায়ু পথে যদি ব্যথার সাথে রক্ত বের হয়, তাহলে এই অংশটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পাইলসের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
পাইলস সমস্যার কারণে যদি ব্যথা হয়, তাহলে প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। পাইলস সমস্যার ব্যথায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ এবং মলম পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেগুলো ব্যবহার করুন। জেনে নেয়া যাক পাইলসের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে -
- পাইলসের সমস্যা দূর করতে ব্যথা জায়গাটি কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। যেভাবে ছোট বাচ্চাদেরকে বোলে গোসল করানো হয় সেরকম একটি বোলে কুসুম গরম পানি নিয়ে তার মধ্যে বসে থাকুন। এইভাবে দৈনিক ৩ বার করুন।
- বায়ুপথ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং সব সময় শুকনো রাখতে হবে। মলত্যাগের পর জোরে ঘষাঘষি করবেন না। প্রয়োজনে টয়লেট পেপার হালকা করে ভিজিয়ে নিয়ে জায়গাটি মুছে নিন।
- বিছানায় শোয়ার সময় পা উঁচু করে রাখলে পাইলসের কোষ গুলোতে রক্ত চলাচল সহজ হয়। তাই বিছানায় শুয়ে পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে রাখতে পারেন। এছাড়াও খাটের নিচে পা রাখার জায়গায় এমন কিছু দিয়ে রাখতে পারেন, যাতে জায়গাটি উঁচু হয় এবং আপনি পা রাখতে পারেন। এতে আপনার ব্যথা অনেক উপশম হবে।
- এক টুকরো বরফ একটা প্যাকেটের মধ্যে নিয়ে তার উপরে একটা তোয়ালে বা কাপড় পেঁচায়ে বায়ু পথের ব্যথা জায়গায় ধরে রাখতে পারে। এতে ব্যথার অনেক উপশম পাবেন।
পাইলস রোগের অপারেশন সম্পর্কে জেনে নিন
আপনি এতক্ষণে জানতে পেরেছেন পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার? সে সম্পর্কে। ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে যদি আপনার পাইল সমস্যার সমাধান না হয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমেও যদি আপনি এই রোগের সমস্যার সমাধান না পান। তাহলে প্রয়োজনে অপারেশনের দরকার হতে পারে। তার জন্য আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসকরাই বলে দিবে অপারেশন করতে হবে কিনা। পাইলস রোগের সাধারণত তিন ধরনের অপারেশন করা হয়। জেনে নেয়া যাক পাইলস রোগের অপারেশন সম্পর্কে -
- হেমোরয়েঢেকটোমি: এই অপারেশনে মূলত পাইলসের বোঁটা গুলো কেটে ফেলা হয়।
- স্টেপলড হেমোরয়েডোপেক্সি: এই অপারেশন পদ্ধতির মাধ্যমে পাইলসের বোঁটা গুলোকে বায়ু পথে পুনরায় ভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
- হেমোরয়েডাল আর্টরি লাইগেশন: এই পদ্ধতির মাধ্যমে পাইলসের বোঁটা গুলোকে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করার জন্য অপারেশন করা হয়। যাতে গোটা গুলো শুকিয়ে যেতে পারে।
হেমোরয়েড বা পাইলসের ঝুঁকিতে কারা বেশি থাকে
এই রোগটি বিশেষ করে যাদের ফ্যামিলিতে ছিল, যেমন- পিতা-মাতার বা ফ্যামিলির কারো মধ্যে যদি এই রোগ থাকে, সেক্ষেত্রে তারপর পরবর্তী লোকদের পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনার পাইলস হওয়ার কারন সম্পর্কে যদি আপনি নিশ্চিত হতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জেনে নিতে পারেন। তারা অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে পারবেন আপনার পাইলস হওয়ার কারণ সম্পর্কে। এই কথাগুলো দ্বারা বোঝা যায় পাইলস হতে বয়সের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। পারিবারিক কারো থাকলে কিংবা অন্য কোন সমস্যার কারণে এই রোগটি হতে পারে। তাছাড়াও আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ না করলে ছোট বড় সকলের ক্ষেত্রেই এই রোগ হতে পারে।
পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার | আর্টিকেলটি শেষ কথা
পাইলস রোগটি থেকে মুক্তি পেতে আমরা কিছু বিষয় মেনে চললেই এই রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই এই আর্টিকেলটিতে দেয়া বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি জানতে পেরেছেন পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার? সে সম্পর্কে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে নতুন কিছু জানতে পেরে আপনার ভালো লেগেছে।
এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে হয়তো আপনি আপনার অজানা তথ্যগুলো খুঁজে পেয়েছেন। এ আর্টিকেলটিতে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার নজরে দেখবেন। পাইলস বা হেমোরয়েড কি এবং কত প্রকার এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত বা তথ্য থাকলে কমেন্ট বক্সে 👇 জানিয়ে দিবেন।
Comments
Post a Comment