দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায় গুলো অনেকেই জানেনা। দাঁতের পাথর জমা সম্পর্কিত বিষয়ে যদি আপনার কোন ধারণা না থাকে, তাহলে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নিন। আপনি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন। তাই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।
আপনি যদি এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়েন তাহলে আপনি দাঁতে পাথর টার্টার বা ক্যালকুলাস জমলে কি কি ক্ষতি হতে পারে? দাঁতে পাথর জমার কারণ কি? দাঁত সাদা করার ঘরোয়া উপায়? দাঁতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়? সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায় অনেকেই খুঁজে পায় না। দাঁত নিয়ে সকলেরই বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় দেখা দেয়। দাঁতের যদি নিয়মিত যত্ন না নিন তাহলে দাঁতের জন্য ক্ষতিকর কিছু অভ্যাস দাঁতের আরও ক্ষতি করে তুলে। দাঁতে থাকা বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে একটি সমস্যা হলো দাঁতে পাথর হওয়া। দাঁতের উপরে এক ধরনের হলুদ কিংবা বাদামী রঙের প্রলেপ দেখা যায়। আর এই রংটা ধীরে ধীরে কালসে হয়ে যায়। এটা কে বলা হয় দাঁতের পাথর। দাঁতের পাথরের ইংরেজি নাম হলো টার্টার বা ক্যালকুলাস। দাঁতে পাথর টার্টার বা ক্যালকুলাস জমলে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
দাঁতে পাথর জমার কারণ কি
দাঁতে পাথর জমার কারণ কি? দাঁত হলো মানুষের চেহারার সৌন্দর্য। তাই সকলেরই দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা উচিত। দাঁতের প্রতি অসচেতনতা থাকার কারণে দাঁতে পাথর বা টার্টার বা ক্যালকুলাস জমে। মূলত এই সমস্যাটা ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করার কারণে হয়। মুখের মধ্যে যে জীবন গুলো থাকে এবং খাদ্য কণা ও থুতুর মধ্যে প্রোটিন একসাথে মিলিত হয়ে তৈরি হয় প্লাক। আর এই প্লাককে নিয়মিত যদি পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে মিনারেলসের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্তরের উপর স্তর জমে যায়।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
এটি শক্ত হয়ে যেয়ে জমা হয় দাঁতে পাথর। অনেকের ক্ষেত্রে দাঁতে পাথর হয় না। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই দাঁতে পাথর খুব বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে যারা মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং আলু বেশি পরিমাণে খায়, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও যদি কেউ ময়দার তৈরিকৃত খাবার বেশি খায়, তাহলেও দাঁতে পাথর জমার সম্ভাবনা থাকে। যারা ধূমপান এবং মাদকে আসক্ত, মাদক জাতীয় দ্রব্য যারা চিবিয়ে নেশা করেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। এই ছিলো দাঁতে পাথর জমার কারণ সমূহ।
দাঁতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
দাঁতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনার জানা উচিত দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায় গুলো ও দাঁতে পাথর টার্টার বা ক্যালকুলাস জমলে কি কি ক্ষতি হতে পারে? সে সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। দাঁতের সমস্যা হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দৈনিক দুই থেকে তিনবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। প্রতিবার ব্রাশ করার সময় অন্তত দুই মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করুন। তিন মাস পর পর টুথব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে।
দাঁতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা পেতে ফ্লোয়ারাইট যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। দাঁতে কোন সমস্যা না থাকলেও ছয় মাস পর পর ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। সাথে স্বাস্থ্যকর খাবারও খেতে হবে এবং তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে। দাঁতকে সুস্থ রাখতে নিম ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে পারেন। নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে আমাদের মুখের ভিতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ধ্বংস করে দিবে খুব সহজেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে মুখে ক্লাস তৈরি হয় না। এর কারণে মুখে দুর্গন্ধও সৃষ্টি হয় না। নিম ডালে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল। যা মুখের গোড়া থেকে সব ধরনের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিম ডালের ব্যবহারে দাঁতে থাকা হলুদ ভাব দূর করে এবং বিভিন্ন ধরনের দাঁতের ব্যথা থেকে রক্ষা করে। আপনি এই সম্পূর্ণ নিয়মগুলো মেনে চললে দাঁতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
দাঁত সাদা করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নিন
দাঁত সাদা করে আপনার চেহারার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলুন। যাতে মানুষের হাসির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলে। আর এই চেহারা সৌন্দর্যকে বাড়াতে আপনি যদি সুন্দর হাসির মালিক হতে পারেন, তাহলে সবার মন জয় করতে পারবেন। সবার মন জয় করা ও দাঁতের সৌন্দর্য বাড়াতে আপনার জানা উচিত দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায় গুলো সম্পর্কে। যদি আপনি দাঁতকে সাদা করতে চান কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে দাঁত হলুদ রঙের হয়ে যায়,
তাহলে দেখতে সুন্দর লাগে না। এই সমস্যাটি আপনার হাসিকে দেখতে অস্বস্তিকরের কারণ করে তুলবে। দাঁতকে ঝকঝকা সাদা করার জন্য একগাদা পরিমাণের টাকা খরচ করার কোনো দরকারই হয় না। কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলেও আপনি আপনার দাঁতকে করতে পারেন ঝকঝকে সাদা। আপনি যদি এই উপায়গুলো মেনে চলেন, তাহলে আপনার দাঁতকে সাদা করতে এবং দাঁতের হলুদ দাগ দূর করতে বেশি সময় লাগবে না। চলুন জেনে নেয়া যাক দাঁত সাদা করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে -
- দাঁত সাদা করতে বেকিং সোডার পেস্ট: এক চামচ পরিমাণে বেকিং সোডা এবং ২ চা চামচ পরিমাণে পানি মিশিয়ে নিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি আপনার টুথব্রাশে নিয়ে দুই মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করুন। এই মিশ্রণটি দাঁতের হলুদ দাগ দূর করে এবং দাঁতের গোড়া শক্ত করে।
- লেবুর খোসার ব্যবহার: দাঁত সাদা করতে ৪ থেকে ৫ টি লেবুর খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকানো হয়ে গেলে খোসা গুলো ভালো ভাবে ব্লেন্ডারে গুড়া করে নিন। এটি ভালো একটি বোতল বা বয়ামে সংগ্রহ করে রাখুন। প্রয়োজনমতো ব্যবহার করুন। ব্যবহার করার আগে অল্প একটু গরম পানিতে এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং মাজুল। দাঁত সাদা রাখতে এই পেস্টটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।
- নারকেল তেলের ব্যবহার: দাঁত সাদা করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হল নারিকেল তেলের ব্যবহার। নারিকেল শুধুমাত্র চুলের সৌন্দর্যকেই বাড়িয়ে তুলে না। পাশাপাশি দাঁতের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতে অনেক সাহায্য করে। নারিকেল তেলে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। দাঁত সাদা করতে শুধুমাত্র ২ চা চামচ নারিকেল তেল নিন। এর সাথে কোন কিছু মেশানোর একদমই দরকার নেই। শুধু নারিকেল তেলটুকু দাঁতে কিছু সময় ধরে মেজে নিতে থাকুন। এরপর এভাবে দুই মিনিট রেখে দিন এবং দুই মিনিট পরে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। নারিকেল তেলের ব্যবহারে দাঁত অতি দ্রুতই সাদা হয়ে যাবে। দাঁতে পাথর টার্টার বা ক্যালকুলাস জমলে কি কি ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে একটু পরে আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন।
দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায়
দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায় কি? তা অনেকেই বুঝতে পারে না। আপনার দাঁতে যদি পাথর জমে, সেক্ষেত্রে আপনি একজন ডেন্টাল চিকিৎসকের কাছে গিয়ে স্কেলিং করিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি চাইলে ঘরোয়া কিছু উপায়ে দাঁতের পাথর দূর করতে পারেন। তাই আপনিও ঘরে বসে এ সমস্যার সমাধান করে নিন। জেনে নেয়া যাক দাতে পাথর জমলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে -
- ব্রেকিং সোডার মিশ্রণ: প্রথমেই আপনাকে বেকিং সোডা, ডেন্টাল পিক, লবণ, হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড, পানি, টুথব্রাশ, কাপ এবং এন্টি সেপটিক মাউথ ওয়াশ নিতে হবে। এরপর কাপের মধ্যে এক টেবিল চামচ পরিমাণে বেকিং সোডা নিন এবং এর সঙ্গে ২ চামচ লবণ নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। দাঁত ব্রাশের আগে গরম পানিতে ব্রাশটি ভিজিয়ে নিন। এবার বেকিং সোডা ও লবণ মিশ্রিত উপকরণটি দিয়ে পাঁচ মিনিট দাঁত ব্রাশ করুন।
- ব্রাশ করা হয়ে গেলে পরে কুলকুচি করে নিন। একটা হাইড্রোজেন প্যারোক্সাইডের সাথে আধ পরিমাণে গরম পানি মিশিয়ে নিন এবং এই পানি মুখে নিয়ে পাঁচ মিনিট সময় রেখে দিন। এরপর বাকি পানি দিয়ে কুলকুচি করে নিন। দাঁতের হলুদ ক্যালকুলাস দূর করতে ডেন্টাল পিক দিয়ে ধীরে ধীরে গষে নিন। ডেন্টাল পিক ব্যবহার করার সময় সাবধানতার সাথে ব্যবহার করবেন। যাতে দাঁতের মাড়িতে কোন সমস্যা না হয়। এরপর আবারও অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করে নিন।
- স্ট্রবেরি ও টমেটো: স্ট্রবেরি ও টমেটো দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। দাঁতের পাথর দূর করতে ও টমেটো দাঁতে ঘষে নিতে পারেন। ঘষে নেয়ার পর এভাবে পাঁচ মিনিট রেখে দিন। এতে যখন দাঁতের অ্যান্টিসেপটিক নরম হয়ে আসবে, তখন গরম পানিতে হালকা বেকিং সোডা মিশিয়ে কুলি করে নিন। স্ট্রবেরি ও টমেটো ছাড়াও আপনি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ক্যাপসিকাম, পেপে, লেবু ও কামরা লেবুর ব্যবহার করতে পারবেন।
দাঁতে পাথর টার্টার বা ক্যালকুলাস জমলে কি কি ক্ষতি হতে পারে
কোন খাদ্য খাওয়ার পরে নিয়মিত ব্রাশ করার পরেও দাঁত পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। খাদ্য কণা দাঁতের মধ্যে ঢুকে থাকে। ধীরে ধীরে এই খাদ্য গোনা থেকেই সৃষ্টি হয় ক্যালকুলাস বা দাঁতের পাথর। জেনে নেই দাঁতে পাথর জমলে কি কি ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে -
- আস্তে আস্তে দাঁতের মাড়ি নিচের দিকে নেমে যেতে পারে এবং এর কারনে দাঁত নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং এটি ব্রাশ করার সময় দেখা যায়।
- মাউথওয়াশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলেও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় না।
- ধীরে ধীরে দাঁতের মাড়ি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
- মুখ থেকে দুর্গন্ধ হওয়া শুরু হতে পারে।
- দাঁতের ক্ষয় হয়ে যেতে পারে।
লেখকের শেষ কথা | দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায়
GAZI MAX IT এর পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা দাঁত সাদা করা ও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করার উপায় ও দাঁতে পাথর টার্টার বা ক্যালকুলাস জমলে কি কি ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর খুজে পেয়েছেন।
এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে হয়তো আপনি আপনার অজানা তথ্যগুলো খুঁজে পেয়েছেন। এরকম নিত্য নতুন স্বাস্থ্যসম্মত বিষয় সম্পর্কে জানতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে এরকম আর্টিকেল নিয়মিত পেয়ে যাবেন। এ আর্টিকেলটিতে যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে ক্ষমার নজরে দেখবেন। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত বা তথ্য থাকলে কমেন্ট বক্সে 👇 জানিয়ে দিবেন। আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের সুস্থতা কামনা করে আর্টিকেলটি আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
Comments
Post a Comment